১৮ জুন থিয়েটার ও নাট্যজনদের কাছে বিশেষ দিন। কেননা ১৯৪৩ সালের এই দিনে জন্মেছেন বাংলা নাট্যজগতের কিংবদন্তী অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। একুশে পদক এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রাপ্ত এই অভিনয়শিল্পীর ৭৮তম জন্মদিন শুক্রবার (১৮ জুন)।
মজার বিষয় হচ্ছে, কাকতালীয়ভাবে মায়ের মতো একই তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার। সম্প্রতি তিনি এসেছিলেন চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত আয়োজন তিনশো সেকেন্ডে। শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ত্রপা কথা বলেন তার অভিনয় ক্যারিয়ার ও কর্পোরেট দুনিয়ার হালচাল নিয়ে।
তবে তার কথায় বার বার ফিরে ফিরে আসে পরিবার ও বাবা-মায়ের কথা। বিশেষ করে মা কিংবদন্তী অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারকে নিয়ে জানান কিছু অজানা কথা।
এরমধ্যে ত্রপা জানান, সত্তরের দশকের শেষে মুক্তি পাওয়া কালজয়ী সিনেমা ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’তে অভিনয়ের কথা ছিলো ফেরদৌসী মজুমদারের। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত কাজটি করেননি।
কেন করেননি, সেটাও অনুষ্ঠানে জানালেন ত্রপা। বললেন, ফেরদৌসী মজুমদারের মতো মা হওয়া খুব কঠিন। এটা আমি তার সন্তান হিসেবে বলছি। কারণ আমি যখন ছোট, আমার মা ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’র মতো ছবি ছেড়ে দিয়েছেন।
ত্রপা বলেন, মা তখন বলেছিলেন, ‘ফিল্ম করার জন্য যে সময় দিতে হয়, আমি আমার সন্তানকে ছেড়ে সেই সময়টুকু দিতে পারবো না।’ আমি আজও মাকে বলি, এটা মায়ের জীবনে অন্যতম ভুল। এটা ঠিক হয়নি।
মায়ের এমন ত্যাগের কথা সামনে এনে ত্রপা বলেন, আমার সন্তানের জন্য সেই জায়গা পর্যন্ত আমি যেতে পারবো কিনা, জানি না। তবে এটাও ঠিক, আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গা হচ্ছে ‘আমি মা’! আমার সন্তানের জন্য আমি যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত। সে সেভাবেই বাঙালি মনন নিয়ে বিশ্বনাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠছে।
ফেরদৌসী মজুমদারের জন্ম বরিশালে হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। তার বাবা খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। তার ভাইবোন ছিল মোট ১৪ জন যাদের মধ্যে ৮ জন ভাই এবং ৬ জন বোন। সবচেয়ে বড় ভাই প্রয়াত শিক্ষাবিদ কবীর চৌধুরী এবং মেজ ভাই শহীদ মুনীর চৌধুরী। তাদের পৈত্রিক নিবাস ছিল নোয়াখালীতে। রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে আসেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন খ্যাতিমান অভিনেতা রামেন্দু মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তারপর প্রণয় সূত্রে তাকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিনি ফেরদৌসী মজুমদার।
ফেরদৌসী বড় ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর হাত ধরে মঞ্চে জীবনের প্রথম অভিনয় করেন রোবট চরিত্রে। মুনীর চৌধুরী রচিত ‘একতলা দোতলা’ নাটকের মধ্য দিয়ে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু। তার মঞ্চের ‘কোকিলারা’ কিংবা টিভি নাটক ‘সংশপ্তক’র হুরমতি চরিত্রের দৃশ্যায়ন দর্শক হৃদয়ে আজো গাঁথা। প্রযোজক আতিকুল হক চৌধুরী প্রযোজিত ‘সারেং’ দিয়ে তার বেতার নাটকের যাত্রা শুরু।