ভারতের রাজধানী দিল্লীতে হাজারো কৃষক তাদের ফসলের ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিতের দাবিতে আবারও বিক্ষোভের জন্য জড়ো হতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্ষোভ চলাকালীন এক কৃষকের মৃত্যু হলে বিক্ষোভ স্থগিত করা হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
কৃষকদের আন্দোলন ঠেকাতে দিল্লীর সীমানায় ব্যাপক ব্যারিকেড এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকলেও কৃষকদের বিক্ষোভ আবার শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের ভোটার তালিকার একটি বড় অংশ কৃষক। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৃষকদের বিরোধিতা করতে চাইবে না। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে যখন কৃষকদের বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয় তখন সরকার পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের কৃষকদের দিল্লীতে মিছিল করা থেকে বিরত রাখতে ইউনিয়নগুলোর সাথে আলোচনা করেছিল।
কর্তৃপক্ষ কৃষকদের সব দাবি পূরণ করতে না পারায় তিনবার সরকারের সঙ্গে আলোচনায়ও কোনো সমাধান হয় নাই। নিশ্চিত মূল্য ছাড়াও, কৃষকরা বয়স্কদের জন্য পেনশন দাবি করেছে এবং সরকারকে তাদের ঋণ মওকুফ করার দাবি জানিয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, সরকার গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিমের অধীনে কর্মদিবসের সংখ্যা ১০০ থেকে দ্বিগুণ করে ২০০ দিন যেন করে। কৃষকরা চায় ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে সরে যাক এবং সমস্ত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করুক।
বুধবার ৬ মার্চ কৃষক ইউনিয়নের দেয়া দুটি প্রস্তাব অনুসারে, সারাদেশের কৃষকরা মেট্রো এবং বাসসহ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে দিল্লিতে একত্রিত হবে। কৃষকরা আগামী ১০ মার্চ চার ঘন্টার জন্য রেল রোকো কর্মসূচি যার অধীনে ট্রেনগুলো বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ২০২০ সালের কৃষকদের বিক্ষোভে তারা দাবি করেছিলেন সরকার যেন তাদের তিনটি প্রস্তাবের আওতায় খামার আইন বাতিল করে যা খামারের পণ্যের বিক্রয়, মূল্য নির্ধারণ এবং সংরক্ষণের নিয়মগুলো শিথিল করবে।
খামার ইউনিয়নগুলো বলেছিল, প্রস্তাবিত নিয়মগুলো বড় সংস্থার বাণিজ্যের জন্য বাজার খুলে দেয়ায় কৃষকদের অসুবিধায় ফেলতে পারে। কয়েক মাস বিক্ষোভের পর, ফেডারেল সরকার ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রস্তাবিত নিয়মগুলোর বাস্তবায়ন প্রত্যাহার করেছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে যখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, পাঞ্জাব সীমান্তে ২২ বছর বয়সী এক কৃষক মারা যান। পাঞ্জাবের রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাথায় গুলি লেগে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগে পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে তার পরিবার তার লাশ দাহ করতে অস্বীকার করেছিল।
কৃষক ইউনিয়নগুলো সেই কৃষকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের বিক্ষোভ স্থগিত করেছিল। গত রোববার তার শেষ ক্রিয়ার সময়ই বিক্ষোভকারীরা দিল্লীতে তাদের পদযাত্রা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।