চরিত্রটির ট্রমা আমাকে এখনো নাড়া দেয়: ফারিণ
প্রথমবার ওয়েব সিরিজে ফারিণ। জি-ফাইভে যা মুক্তি পাচ্ছে ৯ জুলাই…
দীর্ঘ দিনের ক্যারিয়ার নয়, তবে অল্পদিনে অভিনয় দিয়ে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। এবার জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান’-এ পেলেন কাজের সুযোগ, শুধু তাই নয় তিনিই এই ওয়েব সিরিজটির কেন্দ্রীয় চরিত্র! বলছি অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের কথা।
এটি তারও প্রথম ওয়েব সিরিজ। ভারতীয় প্লাটফর্ম জি-ফাইভে ৯ জুলাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একযোগে ওয়েব সিরিজটি দেখা যাবে। অন্যদের সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে দেখতে হলেও বাংলাদেশের দর্শকরা সিরিজটি দেখতে পারবেন একেবারে বিনামূল্যে।
নিজের প্রথম ওয়েব সিরিজটি নিয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ফারিণ। এই সিরিজে কাজের অভিজ্ঞতা, ফারুকীর নির্দেশনা- সব মিলিয়ে ‘লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান’ কেন্দ্রীক ভিডিও সাক্ষাৎকারে ফারিণ কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
‘লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান’ এ কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
কোনো চাপ অনুভব করিনি। কাজটির সঙ্গে তিনমাস যুক্ত ছিলাম। সিরিজটি করা আমার জীবনে নেয়া সেরা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই একটি কাজের মাধ্যমে যা শিখেছি পুরো ক্যারিয়ারে এতো শেখার সুযোগ আগে হয়নি। চরিত্র নিয়ে প্রত্যেক শিল্পীর একটা ক্ষুধা থাকে। আমার মনে হয় প্রত্যাশার চেয়ে আমি বেশি করতে পেরেছি। পুরো টিম খুব সংগঠিত ছিল। সাতটায় শুটিং হলে রাত নটার মধ্যে আমরা প্যাকাপ করতাম। প্রত্যেকেই জানতো কার কাজ কোনটা। সবকিছুই শৃঙ্খলভাবে করেছি। প্যান্ডামিকের কারণে আগে একটু ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ডিলে হতে পারে। আমরা যখন শুটিং করি তখন সংক্রমণ কম ছিল। তাই সমস্যা হয়নি।
এই ওয়েব সিরিজে কোন ধরনের চরিত্রে দর্শক আপনাকে পাবে?
এটি আট পর্বের ওয়েব সিরিজ। আমি সাবিলা চরিত্রে অভিনয় করেছি, যেটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। সাবিলার একটা জগত আছে। যেখানে তার সঙ্গে বাবার সম্পর্ক, স্বামী ও অফিসের সম্পর্ক আছে। তাছাড়া সাবিলার একটা আলাদা জগৎ আছে। শুধু সাবিলা নয়, আরও যারা অভিনয় করেছেন প্রত্যেকেরই এক একেকটা গল্প আছে। রয়েছে অনেক সাসপেন্স ও টুইস্ট। বাংলাদেশে অনেক থ্রিলার কাজ হলেও এটা একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী থ্রিলার কাজ। খুব সূক্ষ্ম দাগের মধ্য দিয়ে গল্পটা এগিয়েছে।
কাজটি করে আপনার জীবনে কোনো পরিবর্তন অনুভব করছেন?
চরিত্রটি যখন ডিল করছিলাম শুধু চরিত্র হিসেবে নেইনি। কিছু করতে গেলেই ভাবতাম সাবিলা এটি কেন করবে? ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলেও ওই চরিত্রের প্রভাব পড়ছে। সাবিলা চরিত্রটি ব্যক্তিজীবনে আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছে। আমার অভিনয় মনে হয় আগের চেয়ে আরও ম্যাচিউরড হবে। পাশাপাশি চিন্তাচেতনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষকে যেভাবে দেখি, কথা বলি সেই ভাবনাতেও পরিবর্তন এসেছে। আমার এবং সাবিলার দুজনের সাইকোলজির ব্রেইন চাইল্ড চরিত্র হচ্ছে সিরিজের চরিত্র। মনে হচ্ছে, সারাজীবন চরিত্রটির প্রভাব আমার মধ্যে থাকবে। এখন আমার মধ্যে যে ম্যাচিউরিটি এসেছে যেটা আগে অনেকটা ছিল না। সাইকোলজিক্যাল চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে গেছে বলে কাজটি আরও ভালো লেগেছে।
আপনার এই পরিবর্তনের কৃতিত্ব কাকে দিবেন, পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে?
ফারুকী ভাইয়ের হেল্প ছাড়া এই সিরিজ কোনোভাবে সম্ভব ছিল না। প্রথমে ধন্যবাদ দিতে চাইবো তিশা আপুকে (নুসরাত ইমরোজ তিশা)। তিশা আপু আমার নাম সাজেস্ট করেছিলেন। আমার বয়স অনুসারে এই চরিত্রটি বহন করতে পারবো কিনা তাদের মধ্যে কনফিউশন ছিল। কিন্তু ফারুকী ভাই আমাকে একটা সাইকেলে উঠিয়ে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছেন। একটা সময় উনি ধাক্কা বন্ধ করলেও আমি সাইকেল চালিয়েছি। তখন ভেবেছি উনি পিছনে আছেন। এই অভিজ্ঞতাটা আমার অন্য কাজের ক্ষেত্রে অনেক হেল্প করবে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কেন অন্য নির্মাতাদের চেয়ে আলাদা?
তার সঙ্গে আগে কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। শুরুতে অনেক ভয়ে ছিলাম কতোখানি পারবো। কিন্তু পরে ঠিক হয়েছে। তার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, কাকে কীভাবে ডিল করতে হয় তিনি জানেন। আমার সঙ্গে যেভাবে ডিল করেছেন আফজাল হোসেন, পার্থ বড়ুয়া, মারিয়া নূরের সঙ্গে যেভাবে করেননি। তিনি মানুষের সাইকোলজি আগে বোঝেন। সিরিজে কাজের আগে উনি বিভিন্নভাবে আমাকে বুঝতে চেয়েছেন। এটা অন্যদের মধ্যে অনেকটা মিসিং। তারা ভাবেন, তারা যেভাবে চিন্তা করছেন সেভাবেই করতে হবে। কিন্তু ফারুকী ভাই আগে আমার সাইকোলজিতে প্রবেশ করেন, বোঝেন আমি কীভাবে চিন্তা করছি। এরপর তার আর আমার সাইকোলজি মার্চ করে কিছু একটা বের করেন।
গ্লোবাল দর্শক সিরিজটি দেখতে পাবেন। কতটা এক্সাইটমেন্টের ব্যাপার নিজের কাছে?
এটা আমার প্রথম আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট। আমি আগেও চ্যানেল আই অনলাইনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, ক্যারিয়ারের পাঁচ বছরের মধ্যে নিজেকে আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে দেখতে চাই। সুযোগটা আমার কাছে তাড়াতাড়ি এসেছে। আমি সৌভাগ্যবান। গল্পটা আমাদের চারপাশের। তাই আমার সংস্কৃতি বিশ্বের মানুষরা দেখবে আর এটা সেই ধরনের গল্প। তাই এক্সাইমেন্টটা একটু বেশী ই।
নাটক ও ওয়েব সিরিজের পার্থক্য কেমন অনুভব করেছেন?
আকাশ পাতাল পার্থক্য। নাটকের গল্প চিত্রনাট্য পাই। দু একদিন শুটিং করি। কিন্তু ওয়েব সিরিজের প্রস্তুতির জন্য আগেই একমাস সবকিছু থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। ভ্যালেন্টাইনের পিক টাইমে সবাই কাজ করলেও আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। কারণ, এই চরিত্রের প্রস্তুতি নেয়াটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুটিং শুরুর ১০ দিন আগে বাসা থেকে প্রতিদিন লোকেশন ভিজিট করতে যেতাম। চরিত্রের জীবনটা দেখার জন্য বাসে যাতায়াত করেছি। প্রতিদিন ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে চরিত্রটি নিয়ে আলোচনা করতাম। কোনো ভাবেই যেন মনে না হয় আমি তাসনিয়া ফারিণ। সাবিলা হিসেবে তৈরি হয়েছি। কবিতা পড়েছি, ছাদে হেঁটেছি। সিরিজটি করার সময় আমি সাইকোলোজিক্যালি তাসনিয়া ফারিণ ছিলাম না। নাটকে এই সুযোগগুলো পাইনি। আমি এখনো পুরোপুরি সাবিলা থেকে বের হতে পারিনি। চরিত্রটির ট্রমা আমাকে এখনো নাড়া দেয়।
মামুনুর রশিদ, আফজাল হোসেন, চঞ্চল চৌধুরী, পার্থ বড়ুয়া, হাসান মাসুদসহ আরও যারা গুণী শিল্পীরা অভিনয় করেছেন তাদের সঙ্গে কাজ করে কী শিখলেন?
তাদের সঙ্গে এর আগে কাজ করিনি। তাই তাদের পর্দার ক্যামেস্ট্রি সম্পর্কে কোনো আইডিয়া ছিল না। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে তারা চরিত্রই। একবারও মনে হয়নি হাসান মাসুদ, চঞ্চল চৌধুরী বা অন্য যারা গুণী শিল্পীরা আছেন তাদের সঙ্গে কাজ করছি। মনে হয়েছে আমার কেউ অফিসের পিওন, বস, হাজবেন্ড। গল্পে যা আছে। এটার কৃতিত্ব অবশ্যই ফারুকী ভাইয়ের।
শোনা যায়, আপনার কাছে অনেক সিনেমার প্রস্তাব যায়। কিন্তু আপনি করতে চান না। সত্যি?
গল্প কাস্টিং পরিচালক মিলে গেলে কালকেই সিনেমা করতে পারি। সবকিছু সঠিক থাকতে হবে এবং আমার কাছে আসতে হবে।