কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাংশের নাফনদীর ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বিকট শব্দের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও দুপুর ১ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত তা বন্ধ ছিল।
এর মধ্যে শনিবার বিকাল ৫ টায় একটি নৌকা যোগে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে গুলিবিদ্ধ এক নারীসহ ৫ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। তাদের নাফনদীতেই আটকে রেখেছেন বিজিবি সদস্যরা।
শাহপরীরদ্বীপের নাফনদী সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন জানিয়েছেন, ওই নৌকায় যে ৫ জন রয়েছে তাদের একজন নারী, ৪ জন পুরুষ। সেখানে নারীটি গুলিবিদ্ধ। বিজিবি সদস্যরা নৌকাটি ঘিরে অবস্থান নিয়েছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই ৫ রোহিঙ্গা নাফনদীতে ভাসমান নৌকায় অবস্থান করেছেন। বিজিবি সদস্যরা তাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছে।
শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে মাছ ধরতে যাওয়া স্থানীয় যুবক রুবেল বলেন, আমরা জেটিতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলাম। এমন সময় একটি নৌকা জেটিতে পৌঁছে। নৌকায় একজন লোককে শুয়ে রাখা হয়েছে। শুনেছি তিনি গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নারী। পরে বিজিবি সেখানে পৌঁছে নৌকাটি ঘিরে রাখে। নৌকায় গুলিবিদ্ধ নারীর হাতে স্যালাইন লাগানো রয়েছে।
তবে জেটিঘাটে থাকা স্থানীয় লোকজন জানান, পাঁচজন রোহিঙ্গা নাগরিক শাহ পরীর দ্বীপ জেটিঘাটে এসেছেন। তার মধ্যে স্বামী স্ত্রী দুজন। আর তিনজন নৌকার মাঝি-মাল্লা বলে জানা গেছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমার থেকে নাফ নদী অতিক্রম করে একটি নৌকায় পাঁচ রোহিঙ্গা এসেছেন বলে শুনেছি। তবে বিজিবি সদস্যরা তাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
তবে বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত বিজিবি সংশ্লিষ্টদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাফনদীর ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দঃ
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাংশের নাফনদীর ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টার পর থেকে শনিবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত কোন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা না গেলেও শনিবার সকাল ৮ টার পর থেকে বদলে যায় দৃশ্যপট। সকাল ১০ টা পর্যন্ত টানা ২ ঘন্টা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে সীমান্তের এপারও। এর পর থেকে কিছুক্ষণ থেমে থেমে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত আর কোন শব্দ শোনা যায়নি। শাহপরীরদ্বীপের একাধিক বাসিন্দার সাথে আলাপ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম জানান, নাফনদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। যেসব স্থান থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসছে, সেখানে রাখাইন রাজ্যের মংডুর শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকা অবস্থিত। এসব এলাকায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি’র) কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ওই চৌকি ঘিরেই চলছে এই সংঘর্ষ।
তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশের প্রচুর গোলাগুলি শব্দ শোনা যায়। তবে রাতে কোনো ধরনের শব্দ শোনা যায়নি।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা নবী হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে মিয়ানমার সীমান্ত শান্ত ছিল। কিন্তু শনিবার সকালে বিকট শব্দে এপারের মাটি কেঁপে উঠেছে। এতে তারা ভীত হয়ে পড়েছেন।
বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিকট শব্দ ও গোলাগুলির খবর পেয়েছেন। সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক স্পিড বোট যোগে টহল দেয়া হচ্ছে। কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এটি মিয়ানমারের সমস্যা। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনভাবে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।