মাত্র ছয় বছর বয়সে শিকার হয়েছিলেন যৌন নির্যাতনের। সাত বছরে ধরেছিলেন সিগারেট, আট বছরে হয়ে উঠলেন মাদক ব্যবসায়ী। গল্পটা অন্ধকার জগতের দিকেই এগোতে পারতো পুরোপুরি। তা না হয়ে গল্পের চরিত্রটি পরিণত হয়েছেন একজন সফল ফুটবলারে, তিনি ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেলে আলি। ২০১৮ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে তুলতে অনবদ্য অবদান ছিল এ মিডফিল্ডারের।
গত মৌসুমে এভারটন থেকে ধারে তুরস্কের ক্লাব বেসিকতাসে খেলেছেন আলি। মৌসুম শেষে ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে। পরে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছিল এভারটন মিডফিল্ডারের। ছিলেন পুনর্বাসন কেন্দ্রেও। গতমাসেই বেরিয়েছেন পুনর্বাসন থেকে। বর্তমানে লড়াই করছেন ঘুমের ওষুধের আসক্তি থেকে বেরোতে। এরমধ্যেই কথা বলেছেন ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমে। তুলে ধরেছেন অসুস্থতার বিষয়ে এবং শৈশব স্মৃতি।
‘যখন তুরস্ক থেকে ফিরে আসি, জানতে পারি আমার একটি অপারেশন দরকার। আমার মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক ছিল না। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তখন পুনর্বাসন কেন্দ্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আসক্তি ও ট্রমা মোকাবেলা করে মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক করার জন্য আমার কাছে মনে হয়েছিল পুনর্বাসন কেন্দ্রই সঠিক সিদ্ধান্ত।’
‘মনে করি, এমন পরিস্থিতিতে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং নিজেকে জানতে হবে। অন্যথায় স্বাভাবিক হতে পারবেন না। আমার সমস্যা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।’
‘সত্যি বলতে, একটি খারাপ চক্রে ফেঁসে গিয়েছিলাম। এমন জিনিসগুলোর উপর নির্ভর করছিলাম, যা আমার ক্ষতি করছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। লড়াইয়ে জিতেছি। প্রশিক্ষণে যাচ্ছি এবং দেখাচ্ছি, আমি হাসিমুখে দিন অতিবাহিত করছি।’
‘আসলে যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলাম। কারণ যখন চোট পেয়েছিলাম, আমার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। তখন থেকেই আমার মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। যদিও আমি এটি চাইনি।’
‘পরে ছয় সপ্তাহের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রে যাই। সময়টিতে এভারটন আমাকে শতভাগ সমর্থন করেছে। চিরকাল তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’
এরপর আলি শৈশবের গল্প শুনিয়েছেন। হিকফোর্ড পরিবার তাকে দত্তক নেয়ার আগে জীবনের কিছু কালো অধ্যায় সম্পর্কে বলেছেন। বলেছেন, ছয় বছর বয়সে ‘যৌন নির্যাতনের’ শিকার হয়েছিলেন। যখন শৃঙ্খলা শেখার জন্য আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছিল, পরে ফিরে এসেছেন সেখান থেকে।
‘সাত বছর বয়সে ধূমপান শুরু করি, আট বছর বয়সে মাদক ব্যবসা শুরু করি। একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলেছিলেন, আমি যেহেতু ছোট তাই আমাকে আটকাবে না। তাই ফুটবল নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। আর মাদক দিয়ে আসতাম। এগারো বছর বয়সে পাশের রাজ্যের এক লোক আমাকে একটি সেতুতে ঝুলিয়ে দিয়েছিল।’
‘বারো বছর বয়সে আমাকে দত্তক নেয় হিকফোর্ড পরিবার। তখন এসব থেকে বেরোতে পারি। পরিবারটি আমার জন্য যা করেছে তা করার জন্য আমি আরও ভালো লোকদের চাইতে পারতাম না। ঈশ্বর যদি ভালো মানুষকে সৃষ্টি করে থাকেন, তবে তারাই ছিলেন সেটি।’