রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক হলে মেয়েদের প্রবেশের সময়সীমা বেধে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী মেয়েদের রাত ৯টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক স্বাক্ষরিত আবাসিক ছয়টি ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর মেয়েদের হলে প্রবেশের চূড়ান্ত সময়সীমা সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে।
হলে রাতে প্রবেশের সময়সীমা বেধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবাসিক ছাত্রীরা। তারা বলছেন, হুট করে এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এমন নির্দেশনা দিয়ে মেয়েদের ওপর একপ্রকার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। মেয়েদের রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কাজ থাকতে পারে। এরকম সিদ্ধান্ত কোনভাবে মানা যায় না।
প্রাধ্যক্ষদের দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সকল আবাসিক ছাত্রী হলসমূহে অবস্থানরত ছাত্রীদের হলে প্রবেশের শীতকালীন (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী) সর্বোচ্চ সময়সীমা রাত ৯টা পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কতিপয় আবাসিক ছাত্রী উল্লেখিত সময়সীমার পরেও হলের বাহিরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের আবাসিক সানজিদা ঢালী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ৮টার পর এমনিতেও হল থেকে বের হতে দেয় না। তবে আগে যেকোন সময় হলে প্রবেশ করা যাবে এমন নিয়ম ছিল। এখন সেটাও বন্ধ করে দিচ্ছে। জরুরী কোনো কাজে বাহিরে থাকলেও একজন ছাত্রীকে হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট হেনস্থার শিকার হতে হয়। অভিভাবকের আপত্তি না থাকলেও হল প্রশাসন আপত্তি করে। কোনো ছাত্রীর টিউশনের কারণে রাত হলেও তাকে হলে দরখাস্ত দিতে হয়। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীর ক্ষেত্রে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা সসম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এধরনের নিয়ম প্রবর্তনের চেয়ে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত বেশি জরুরী বলে মন্তব্য করেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবা কানিজ কেয়া। তিনি বলেন, ব্যক্তি নিরাপত্তার চেয়ে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও বেশি জোরদার করতে হবে। শুধু নিয়ম করে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। হলগুলোর সামনে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়াও ক্যাম্পাসের বাকি সবখানেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। মেয়েদের হয়রানির প্রেক্ষিতে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তবেই মেয়েদের প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক, বাইরের নিরাপত্তার বিষয় তো প্রক্টর অফিসের দেখার কথা। ছেলেদের ক্ষেত্রে পুরো সময় খোলা রেখে মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটা উচিত না। মেয়ে হলেও তাদের জরুরী প্রয়োজন থাকতেই পারে। তবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে চলাচল করা ভালো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমরা মেয়েদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ৯টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশনা দিয়েছি। তাছাড়া ৯টার মধ্যে ক্যাম্পাসের সকল দোকানপাট বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরে মেয়েদের তো হলের বাইরে আর কোনো দরকার থাকার কথা না। যদি কারও বিশেষ কোনো দরকার থাকে তবে সে হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে বাইরে থাকতে পারবে।