দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনে সকাল থেকেই গণপরিবহনশূন্য রাজধানীর সড়কগুলো। এতে জরুরি প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রোববার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কাকরাইল, মগবাজার, বাংলামোটর ও শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে চোখে পড়েনি গণপরিবহন। গণপরিবহন না থাকায় হাঁটা বা রিক্সাতেই আস্থা রাখছেন সবার।
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যানবাহন চলাচলে বেশ কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে ডিএমপি। ট্যাক্সি ক্যাব, পিক-আপ, মাইক্রোবাস, ট্রাক ইত্যাদি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) মধ্যরাত ১২টা থেকে এই বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সোমবার (৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোর থেকে রাস্তায় কোনো সাধারণ মানুষের আনাগোনা ছিল না। দোকান পাট, চায়ের স্টল বন্ধ থাকলেও কিছু ভ্রমমাণ চা বিক্রেতাদের দেখা গেছে। ফুটপাত একেবারেই ফাঁকা।
তবে ভোট কেন্দ্রগুলোতে উৎসবের আমেজ ছিল। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ডিউটি দিচ্ছে। একই সঙ্গে কিছুক্ষণ পর পর বিজিবির গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের গাড়ি ও সাংবাদিকদের মোটরবাইক রাস্তায় রয়েছে। সকালে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপস্থিতি বাড়ে। এদিন সড়কে কিছু রিকশা, সিএনজি ও বাস চলাচল করতে দেখা যায়।
রিকশাচালক মো. আলী জানান, নির্বাচনের জন্য রাস্তা- ঘাট ফাঁকা, যাত্রী নেই। কেউ এখন পর্যন্ত রাস্তায় বের হয়নি। সকাল ৬ টায় বের হয়ে এখন পর্যন্ত ৭০ টাকা পেয়েছি।
সিএনজি চালক মো. সাত্তার বলেন, অন্যান্য ছুটির সময় রাস্তায় যাত্রী থাকে। আজকে রাস্তা ঘাট একেবারেই ফাঁকা। সকালে সদরঘাটের একটা ট্রিপ ছিলো। এরপর থেকে বসে আছি।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার জানান, ঢাকা সিটিতে চলাচলকারী ৯০ শতাংশ বাস নির্বাচন উপলক্ষ্যে রিকুইজিশন করে ফেলেছে। অনেক মালিক রিকুইজিশনের ভয়ে বাস বের করছে না। অবশিষ্ট বাস গণকারফিউয়ের মধ্যে চলাচল করবে। আন্তঃজেলা বাসও চলাচল করবে।
নির্বাচন উপলক্ষে রোববার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনী সব সরঞ্জাম ভোটকেন্দ্রে এর আগে পৌঁছে গেছে। আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
যেসব যানবাহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক। জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন এবং ওষুধ, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা ও অনুরূপ কাজে ব্যবহৃত দ্রব্য ও সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন। আত্মীয়স্বজনের জন্য বিমানবন্দরে যাওয়া, বিমানবন্দর হতে যাত্রী বা আত্মীয়স্বজনসহ নিজ বাসস্থানে অথবা আত্মীয়স্বজনের বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত যানবাহন (টিকিট বা অনুরূপ প্রমাণ প্রদর্শন) এবং দূরপাল্লার যাত্রী বহনকারী অথবা দূরপাল্লার যাত্রী হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য যেকোনো যানবাহন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য ১টি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টের (যথাযথ নিয়োগপত্র/পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে) জন্য ১টি গাড়ি (জিপ, কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদি ছোট আকৃতির যানবাহন) রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদন ও গাড়িতে স্টিকার প্রদর্শন সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি প্রদান। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক অথবা জরুরি কোনো কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি প্রদান।
নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা বা কর্মচারী অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি প্রদান। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ছাড়াও আন্তজেলা বা মহানগর থেকে বের হওয়া বা প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক ও প্রধান প্রধান রাস্তার সংযোগ সড়ক বা এ রকম সব রাস্তায় নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন; এবং স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতার নিরিখে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা কিছু যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা শিথিল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন।