রাজধানীর উত্তরায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার ১১ মার্চ রাতে ঢাকার মিরপুর, বনানী, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই আড়াই কোটির বেশি টাকা উদ্ধারসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সানোয়ার হাসান (২৮), মো. ইমন ওরফে মিলন (৩৩), মো. আকাশ মাদবর (২৫), সাগর মাদবর (২২), মো. বদরুল আলম (৩৩), মো. মিজানুর রহমান (২০), মো. সনাই মিয়া(২৮) ও এনামুল হক বাদশা (২৬)।
ডিবি জানায়, ঘটনার দিন ৯ মার্চ উদ্ধার করা ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ নিয়ে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে মোট উদ্ধার হলো ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা।
রোববার ১২ মার্চ দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
তিনি বলেন, উত্তরার তুরাগ এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছি। এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের একটি দল রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এরপর বিভিন্ন সূত্র ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে শনিবার ১১ মার্চ রাতে ঢাকা, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করেছি।
অভিযান ও টাকা উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে হারুন বলেন, প্রথমে রাজধানীর বনানী থেকে সানোয়ার হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার হেফাজত থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনানী থেকে ইমনকে গ্রেপ্তা করা হয়। তার জোয়ার সাহারার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
পরে ঢাকার উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
ডিবির অপর একটি দল সিলেটের সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই ও এনামুল হক বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত ৮ মার্চ সিলেট যাবার কথা বলে একটি হায়েস মাইক্রো বাস ভাড়া করে ডাকাতরা। ডাকাতদের কথা মতো হায়েস গাড়িটির চালক কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে আসলে পেছনের সিট ঠিক করার কথা বলে পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়, এরপর ওই গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্টের গাড়ি ফলো করতে ওঁৎ পেতে থাকে।
ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে মানি প্ল্যান্টের টাকা বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করে আসছিল। তারা জানতো টাকা বহন করার ক্ষেত্রে মানি প্ল্যান্টের কোনো সিকিউরিটি ও অস্ত্র ছিল না।
মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে ডাকাত দল ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্টের গাড়ি অনুসরণ শুরু করে। এভাবে ডাকাত দলের ভাড়া করা হায়েস গাড়ি তুরাগের নির্জন স্থানে পৌঁছার পর দুই গাড়ির ধাক্কা লাগায়।
এই অজুহাতে গাড়ি থেকে ডাকাত দল নামে ও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারা মানি প্ল্যান্টের গাড়ি থেকে কয়েকজনকে নামিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলে যায়। এরপর গাড়িতে থাকা ম্যানেজারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে টাকার ট্রাঙ্কসহ নিজেদের হায়েস গাড়ি নিয়ে ৩০০ ফিটের নির্জন এলাকার দিকে চলে যায়।
ডিবি প্রধান বলেন, ডাকাতরা সেখানে দুটি টাকার ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে দুটি চাউলের বস্তা ও পাঁচটি ব্যাগ টাকা ভর্তি করে। বাকি দুই ট্রাঙ্ককের টাকা দেখে তারা ভয় পেয়ে যায়। কোনো ব্যাগ না থাকায় টাকা ও ট্রাঙ্ক ফেলে পালিয়ে যায়। ড্রাইভারের সিটের উপরে একটা ব্যাগ ফেলে ও নিজেরা কাপড়চোপড় পরিবর্তন করে ফেলে চলে যায়।
অবশিষ্ট ব্যাগটি হায়েসের পেছনের সিটে থাকা ড্রাইভার সুস্থ হয়ে নিজ হেফাজতে নেয়। এছাড়াও সে ট্রাঙ্ক থেকে অবশিষ্ট টাকা ভরে সে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে বাসা থেকে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গত ৯ মার্চ সকালে রাজধানীর উত্তরার তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী ১১ নং সড়কে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে ৯ মার্চ দিনগত রাতে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।