কৃষির অন্যতম সহায়ক সার। ডলারের কারণে সেই সারেও সংকটের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম সার আমদানির জন্য দরপত্র আহবান করা হলেও একজনও দরপ্রস্তাব জমা দেয়নি।
প্রচলিত প্রথা অনুসারে কৃষি মন্ত্রণালয় সার আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সেই দরপত্রের আলোকে প্রস্তাব জমা দেয়। পরে সরকারের অনুমতি নিয়ে সার আমদানি করে।
আসছে আমন মৌসুমের জন্য যে সারের প্রয়োজন হবে, সম্প্রতি তা আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই দরপত্র দেখে একজন আমদানিকারকও প্রস্তাব জমা দেয়নি। রোববার (২৫ জুন) ছিল এই প্রস্তাব জমা দেয়ার শেষ দিন।
এরফলে সার সংকট হওয়ার একটা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি সার আমদানিকারকরা কয়েক দিন আগে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই দরপ্রস্তাব জমা দেয়নি।
বেসরকারিভাবে চার লাখ টন ডিএপি ও দুই লাখ টন টিএসপি আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু পাওনা পরিশোধ না করায় আমদানিকারকরা দরপ্রস্তাবে অংশ নিতে পারবে না বলে জানায়।
কৃষি মন্ত্রণালয় নন ইউরিয়া সারের ভর্তুকি দেয়ার পদ্ধতি অনুযায়ি বেসরকারি আমদানিকারকরা সার আমদানি করে। সরকারি সংস্থা বিএডিসি ও বিসিআইসি এবং বেসরকারি সার আমদানিকারকরা সমন্বিতভাবে সার আমদানি করে। এছাড়া দেশের নিজস্ব কয়েকটি কারখানায় সার উৎপাদন করা হয়। ডিলাররা সেই সার কৃষকের কাছে সরবরাহ করে।
বিএডিসি প্রয়োজনের বেশিরভাগ সার আমদানি করলেও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সার আমদানি করায় সংকট মোকাবিলা সহজ হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নানাবিধ কারণে দরপ্রস্তাব জমা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বেসরকারি আমদানিকারকরা।
বেসরকারি উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ভর্তুকির আওতায় আমদানি করা নন ইউরিয়া সারের পুরোপুরি বিল শোধ না হওয়া পর্যন্ত আগামী অর্থবছরের জন্য সার আমদানি করবে না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন আমদানিকারক চ্যানেল আইকে বলেন, বকেয়া শোধ না করায় নতুন করে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের নন ইউরিয়া সারের বকেয়া বিল পরিশোধ করলে এবং ডলারের সংস্থান করলেই শুধু এই সমস্যার সমাধান হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছর আমদানি করা নন ইউরিয়া সারের বিল এখনো বকেয়া আছে। বেসরকারি আমদানিকারকরা এই অর্থ এখনো পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই অর্থ শোধ করতে হবে।
অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, বেসরকারি সার আমদানিকারকদের প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে খোলা বাজার থেকে ডলারের যোগান ও ডলারের মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এতে সার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো তাদের মূল্য পাচ্ছে না। এতে নতুন করে সার সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে বেসরকারি আমদানিকারকরা কয়েকটি বিষয় সমাধানের জোর দাবি জানিয়েছেন। এরমধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, ডলার সংকট সমাধান করা। একই সাথে বকেয়া পাওনা শোধ করার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণত ডলারের মূল্য উঠানামার সাথে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিল সমন্বয় করা হয়। ডলারের দাম কমলে উদ্যোক্তারা সেটা ফেরত দেয়। আবার ডলারের দাম বাড়লে সরকার তা ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেয়। ডলারের দামের পার্থক্যের এই সমন্বয় গত দুই বছর হয়নি। সমন্বয় করে এই অর্থ দ্রুত দিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আমদানিকারকরা। বিল না পেলেও ব্যাংকের সুদ দিয়ে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
বিল পেতে যে কয়েক মাস দেরি হয়েছে, সে কয়েক মাসের ব্যাংক সুদের অর্থও দিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে তারা। এছাড়া সার সরবরাহকারী দেশগুলোর আমদানির অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার নিশ্চিত করতে আমদানিকারকরা দাবি জানিয়েছেন।
আর মাস দেড়েক পর আমন মৌসুম শুরু হবে, তারপর রবিশস্য। রবিশস্যের সময় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সার প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজনের আগে সার আমদানিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
চলতি অর্থবছর দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। যার পরিমাণ ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই রপ্তানি ঠিক রাখতে কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করা জরুরি বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। কিছুদিন আগে ডলার সংকটে তেল কয়লা আমদানিতে দেরির কারণে বিদ্যুতের প্রচুর লোডশেডিং হয়েছে। সার সরবরাহে যাতে কোনোধরণের নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দেবার পাশাপাশি যথা সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান সংশ্লিষ্ঠদের।