আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত সপ্তাহে ২৩ জন নাবিকসহ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জিম্মি হওয়ার ২ দিন পর্যন্ত জাহাজটির অবস্থানসহ বিভিন্ন তথ্য পরিবারের কাছে জানানোর সুযোগ পেয়েছিলেন জিম্মি নাবিকরা।
জিম্মি নাবিকদের পরিবার ও স্বজনদের সাথে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি জানিয়েছে, গত ১২ মার্চ জিম্মি হওয়ার পর থেকে ২ দিন পর্যন্ত নাবিকদের পরিবারের সাথে যোগাযোগসহ ও অন্যান্য কিছু সুবিধা দিলেও ২ দিন পর জলদস্যুরা সেটিও বন্ধ করে দেয়। তারা যেন অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নাবিকরা তাদের স্বজনদের জানিয়েছেন, জলদস্যুরা জাহাজে থাকা খাবার শুধু খাচ্ছেই না, সেগুলো নষ্টও করছে। অনাহারে থাকার দুশ্চিন্তার কথা জানান জিম্মি নাবিকরা।
জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর খাবার ও পানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এর মধ্যে জিম্মি নাবিকদের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে সশস্ত্র জলদস্যুরা। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ। কয়েক দফায় দস্যুরা জাহাজে আসা যাওয়া করছে। প্রায় সব সময় জাহাজে থাকছে ৩০ থেকে ৪০ জন জলদস্যু। তারা নিয়মিত জাহাজের খাবার খাচ্ছে বলে নিজেদের পরিবারকে জানিয়েছেন নাবিকরা।
জিম্মি থাকা ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের সাথে তার বড় ভাই ওমর ফারুকের সর্বশেষ কথা হয়। তিনি জানান, সোমালি জলদস্যুরা খাবার শুধু খাচ্ছে না। তারা প্রতিবেলায় খাবার নিয়ে সেগুলো আবার নষ্ট করছে। প্রতিবেলায় গড়ে একশো জনের খাবার নষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে খুব শিগগিরই জাহাজে খাদ্য ও পানি সংকট দেখা দিবে।
জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের মা শাহানুর বেগম বলেন, ভারতীয় নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার দেখার পর থেকে ওরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে আমরা জেনেছি। আমাদের সাথে শেষ যখন কথা হয়েছে তখন আমার ছেলে আমাকে বলেছে দিকে ওরা গায়ে হাত না দিলেও অনেক দুর্ব্যবহার করা শুরু করেছে। বিশেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার টহল দেখার পর থেকে জলদস্যুদের আচরণে পরির্বতন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোন যুদ্ধ করে সন্তান ফেরত চাই না। এমনিতেই টহলের হেলিকপ্টার দেখার পর থেকে দস্যুরা জিম্মিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। আমরা চাই মুক্তিপণের মাধ্যমে ওদের ফেরত আনা হোক। অভিযান চললে আমরা আর আমাদের সন্তানদের জীবিত ফেরত পাবো না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
এই বিষয়ে জাহাজটির মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। অভিযান নয়, আমরা শান্তিপূর্ণ যে কোন উপায়ে অক্ষত অবস্থায় নাগরিকদের ফেরত আনতে চাই।