হঠাৎ করে ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র শীতে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন ১৩০-১৪০ জন শিশু জ্বর , ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রনকাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে উপজেলা-জেলার হাসপাতালগুলোতে। গত এক মাসে ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। তবে স্বজনদের অভিযোগ, চরম অব্যবস্থাপনা ও ওষুধ সংকটের কারণে তারা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। রোগীর তুলনায় হাসপাতালে শয্যা অপ্রতুল। এক একটি শয্যায় ৩-৪ জন করে শিশুকে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমনকি ওই শয্যাতেই রোগীর মায়েরাও থাকছেন। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারাও। আত্মীয়দের আরও অভিযোগ, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। নবজাতক ও কম ওজনের শিশুদের চিকিৎসা দেয়ার পরও তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না। গত এক মাসে ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র শিশু কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ হায়দার শাহিন বলেন, ভর্তির হার অনুযায়ী মৃত্যু অনেক কম।
জানা গেছে, হঠাৎ করে জ্বর, সর্দিকাশি ও ডায়রিয়া হওয়ার পর বাড়িতে কোনো সমাধান না হওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে আসতে হয়েছে অনেককে। এ ছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা বাড়ি ফিরছেন। জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়া আর জ্বর সর্দিকাশি ও ডাযরিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন।
অব্যবস্থাপনা ও অপেশাদারিত্বের কারণে চাহিদা মত সব চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ না পেয়ে কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। পর্যাপ্ত ওষুধ না পেয়ে অনেক শিশুকে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে স্বজনরা। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ নেই, তবে সেবিকারদের আচরণে ক্ষুদ্ধ তারা । দুগর্ন্ধে টিকা যায় না হাসপাতালে। চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ কম।
সেবিকারা জানান, রোগীর চাপ বেশি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা গভীর রাতেও আসছেন হাসপাতালে। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। উপায় না পেয়ে অভিভাবকদের ভীড় করছেন হাসপাতালে।
হাসপাতালের সিনিয়র শিশু কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ হায়দার শাহিন অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, খেয়াল রাখতে হবে শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে। তাদের তরল গরম খাবার খাওয়াতে হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত মাসে ১৫-৩৫ ’শ শিশুকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মারা গেছে ১৫টি শিশু । সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৫শ ২৫ শিশু।