শরীরে ডায়াবেটিস নিয়ে বসবাস এখন অনেকেরই। সারাজীবনের জন্য বয়ে বেড়ানো এই রোগ স্বাচ্ছন্দময় জীবনে বড় বাধা। জীবনকে অনেকটাই ছন্দহীন করে তোলে এই রোগ। ইনসুলিন বেড়ে-কমে গেলে ঝক্কির শেষ নেই। কতকিছু মেনে চলতে হয়ে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বচেষ্ট থাকতে হয় আক্রান্তদের। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার পদ্ধতি বেশ জটিল। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে হাঁটা-চলা সবকিছু কিছু সেকেন্ড, মিনিট ধরে মেনে চলতে হয়। এখানেই শেষ নয়। মাঝে-মধ্যেই আবার শরীরের এটা-সেটা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হয়।
আমাদের দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শহরের পথ পেরিয়ে এই রোগ এখন গ্রামর গেরস্থের বাড়িতেও প্রবেশ করেছে। আর তাইতো সকালে গ্রামেও এখন দেখা যায়, দল বেঁধে মানুষ হাঁটছেন। এদেরই অনেকেরই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে, সুস্থ থাকতে হাঁটাহাঁটি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। তথ্য বলছে পৃথিবীতে বর্তমানে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর যে সব দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগামীতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আগের চেয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পৃথিবী ব্যাপী গবেষণাও চলমান রয়েছে। নতুন নতুন ওষুধ ও পদ্ধতিও আসছে। সম্প্রতি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানী ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য নিয়ে এসেছে এক নতুন আশার আলো।
‘ওরসেমা’ নামে নতুন এক ইনজেকশন তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিটি। গত ১৪ নভেম্বর ডায়াবেটিক দিবসে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নতুন সুখবর আনে কোম্পানীটি । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ‘ওরসেমা’ ইঞ্জেকশন নামের নতুন ওষুধ বাজারজাত করতে যাচ্ছে তারা। ঐদিন ডায়াবেটিস দিবসে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার সাথে রাজধানীর বারডেমে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস-এর এই ঔষধটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রথমবারের মত দেশে তৈরি ইঞ্জেকট্যাবল সেমাগ্লুটাইড এই ওষুধ সপ্তাহে একবার গ্রহণযোগ্য, যা প্রতিদিন ট্যাবলেট খাওয়ার ঝামেলা কমিয়ে দেবে এবং ডায়াবেটিস চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এটি প্রি-ফিল্ড সিরিঞ্জ হিসেবে ‘ওরসেমা’ নামে ০.২৫ মি.গ্রা. এবং ০.৫০ মি.গ্রা. এই দুই মাত্রায় বাজারে পাওয়া যাবে।
ওরসেমা’ এই ইনজেকশনের প্রথম সুবিধাটা হলো এটি সপ্তাহে শুধুমাত্র একদিন নেওয়া লাগবে। ফলে একজন ডায়াবেটিক রোগী অনেকটাই স্বাচ্ছন্দে সপ্তাহ পার করতে পারবেন। একবার এই ঔষুধ নেওয়ার পর তিনি পুরো সপ্তাহ জুড়ে চিন্তামুক্ত থাকবেন। ‘ইনসুলিন’-এর সাথে এই ইনজেকশনের মূল পার্থক্যের জায়গা এটিই। কেননা একজন ডায়াবেটিক রেগীকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়। আবার প্রকারভেদে ২/৩ বারও নিতে হয়। ডায়াবেটিকের মুখে খাওয়ার কোনো ওষুধ হলে সেটাও ২ থেকে ৩ বার খেতে হয়। কিন্তু সেমাগ্লুটাইড সপ্তাহে মাত্র একদিন।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড-এর মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ম্যানেজার ডাক্তার গোলাম রিয়াদ চৌধুরী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের এই নতুন ইনজেকশন সম্পর্কে বলেন, ‘ওরসেমা নিঃসন্দেহে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আশার আলো। কারণ এটি ‘প্র-ফিলড সিরিঞ্জ’। আর এখানে বড় সুবিধা হলো ডোজ ক্যালকুলেশনের কোনো ঝামেলা ইেন। এখানে যতটুকু আছে ততটুকুই নিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, সেমাগ্লুটাইড এর প্রারম্ভিক মাত্রা ০.২৫ মি.গ্রা. সপ্তাহে একবার। এরপর ৪ সপ্তাহ পরে মাত্রা বাড়িয়ে ০.৫ মি.গ্রা. হবে সপ্তাহে একবার। সপ্তাহে ১ মি.গ্রা. এর বেশি সেমাগ্লুটাইড নির্দেশিত নয়।
সেমাগ্লুটাইড সপ্তাহে একবার খাবার গ্রহণের পূর্বে অথবা পরে যে কোন সময় গ্রহণ করতে হবে। পেট, উরুতে বা উপরের বাহুতে চামড়ার নিচে সেমাগ্লুটাইড ইনজেক্শন প্রয়োগ করতে হবে। মাত্রা পরিবর্তন না করে, প্রয়োগের স্থান পরিবর্তন করে সেমাগ্লুটাইড গ্রহণ করা যেতে পারে। সেমাগ্লুটাইড কখনই মাংসপেশি অথবা শিরা পথে ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রয়োজন হলে সপ্তাহে সেমাগ্লুটাইড গ্রহণ করার দিন পরিবর্তন করা যেতে পারে তবে ২টি ডোজ এর মধ্যে অন্তত ৩ দিনের (৭২ ঘণ্টা) ব্যবধান থাকতে হবে। নতুন ডোজিং এর দিন নির্বাচন করার পরে, সাপ্তাহিক ডোজ একবার করে চালিয়ে যেতে হবে।
মিসড ডোজ সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি কোনও ডোজ মিস হয় তবে এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রহণ করা উচিত মিসড ডোজের ৫ দিনের মধ্যে। যদি ৫ দিনেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয় তবে মিসড ডোজ গ্রহণ না করে এবং পরবর্তী ডোজটি নিয়মিত নির্ধারিত দিনে গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোগীরা সাপ্তাহিক ডোজ এর সময়সূচি নিয়মিতভাবে পুনরায় শুরু করতে হবে।
বলে রাখা প্রয়োজন একজন ডায়াবেটিক রোগীকে তিনটি বিষয় মান্য করে চলতে হয়। প্রথমত: ডায়েট, দ্বিতীয়ত: এক্সারসাইজ, তৃতীয়ত: ওষুধ। এটি সত্য প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে গিয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের কাহিল হয়ে যেতে হয়। সব কাজের ভীড়ে মনে করে ইনসুলিন নিতে হয় দিনে দুই বা তিনবার। কিন্তু বিকল্প হিসেবে ইনসেপ্টার ‘ওরসেমা’ নামের এই নতুন ইনজেকশন সত্যিই নতুন আশার আলো এনেছে। অনেক ঝক্কি কমিয়ে দেবে এই ইনজেকশন।