বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকা যখনই করা হয়, সেখানে ঢাকার অবস্থান প্রায় সবসময়ই থাকে। শুক্রবার সকালে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১০১ নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা ১০তম স্থানে অবস্থান করছে। সেই সাথে রাজধানী ঢাকায় বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, পাকিস্তানের লাহোর, ভারতের দিল্লি ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ ১৮১, ১৫৯ এবং ১৪১ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকায় প্রথম তিনটি স্থান দখল করেছে।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে। এখানে বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। তবে এখন বৃষ্টির মৌসুম চললেও দূষণের তালিকায় ১০তম হওয়া শঙ্কার।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো, ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো। ক্রমাগতভাবে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং অক্ষমতার জন্য বায়ু দূষণ শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার কারণে হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ক্যান্সার হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। ঢাকাবাসী এমন ঝুঁকির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। এরমধ্যে কিছুদিন ধুলাবালি রোধে সিটি কর্পোরেশন পানি ছিটানোর কর্মসূচি নিলেও এখন তেমন একটা লক্ষণীয় নয়।
অথচ বায়ুদূষণ বন্ধে রাস্তা, বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিস ও ভবন নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও মেরামত কার্যক্রম চলার সময় অস্থায়ী বেষ্টনী দিয়ে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা; ট্রাক বা লরিতে উন্মুক্ত অবস্থায় বালু, মাটি, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, নির্মাণ চলাকালে পর্যাপ্ত পানি ছিটানো হলেও বায়ুদূষণ অনেকটাই কমে আসে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলাসহ সর্বোপরি বায়ুদূষণের জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।।
আমরা মনে করি, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সময় এসেছে। এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। কেননা মানুষই যদি সুস্থ না থাকেন কিংবা প্রতিনিয়ত দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার স্থান হয়, দীর্ঘমেয়াদে সেটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও ম্রিয়মান হয়ে যায়। সেজন্য ঢাকার দূষণ রোধে তড়িৎগতিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।