জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাসহ নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার এবং আটক সবাইকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে ৩০টির বেশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।
‘প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ’-এর ব্যানারে এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে সংগঠনগুলো অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব ধরনের গণবিরোধী এবং নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করারও দাবি জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। কিন্তু তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং সেই মামলায় চার্জশিট দায়েরের পর ৮ মাস ধরে তিনি কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। বারবার আবেদন করেও, রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তির কারণে জামিন পাননি খাদিজা। রাষ্ট্র কোনভাবেই এমন নিবর্তনমূলক আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দিতে পারে না বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কীভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রযোজ্য হয় সে প্রশ্নও তোলা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, শুধু খাদিজাই নয়, এই মুহূর্তে সারাদেশে হাজারো মানুষ এই নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী দিন কাটাচ্ছেন। অবিলম্বে সেসব বন্দীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংবিধানের মৌল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে দেশের জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যম, শিক্ষক, ছাত্র, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি এবং বিরোধী মত দমনের অন্যতম হাতিয়ার বানানো হয়েছে এ আইনকে।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এ ধরনের নিবর্তনমূলক আইন কখনোই বলবৎ থাকতে পারে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। অগণতান্ত্রিক, নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে সরকার একের পর এক সংবাদকর্মী ও সমাজের নানাস্তরের মুক্তচিন্তার মানুষকে গ্রেপ্তার, ভয় ভীতি দেখানোর মাধ্যমে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে চলেছে। ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে কথায় কথায় মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে গ্রেপ্তার-হয়রানির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এসব অগণতান্ত্রিক আইনকানুন এবং দমন-পীড়ন স্বাধীনতার ঘোষণা তথা সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদার পরিপন্থী বলেও প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। তাই, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে এসব সংগঠন।
প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গণসংস্কৃতি কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, রাজু বিতর্ক অঙ্গণ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, প্রগতি লেখক সংঘ, গণসংস্কৃতি পরিষদ, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ, বাংলাদেশ থিয়েটার, তীরন্দাজ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, এই বাঙলায়, ঢাকা ড্রামা, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠী-সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশন, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, থিয়েটার ’৫২, সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ, শহীদ আসাদ পরিষদ, মাদল, বটতলা- এ পারফরমেন্স স্পেস, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।