বালতিভর্তি পানিতে পড়ে আজিমপুরে দিবাযত্ন কেন্দ্রে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ১১ মাস বয়সী শিশু উম্মে আলিফাকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুটির মা ইসমাত আরা আজিমপুরে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকরি করেন। শিশুটির বাবা হাকিবুল হাসান একটি বেসরকারি কোম্পানিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায়।
চাকরির সুবাদে চাকরিজীবী বাবা-মা তাদের দুগ্ধ দুই শিশুকে লালবাগের ‘আজিমপুর মধ্যবিত্ত ডে-কেয়ার সেন্টার’-এ রেখে কর্মস্থলে যান এবং বিকালে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে সেখান থেকে সন্তানদের নিয়ে বাসায় যান।
শিশুটির মা ইসরাত আরা জানান, প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালেও তাদের দুই সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় ডে-কেয়ার রেখে কর্মস্থলে যান। দুপুরে ডে-কেয়ার থেকে ফোনে জানানো হয়, তাদের ছোট সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি দ্রুত সেখানে যাওয়া উদ্দেশ্যে বের হয়েই দেখতে পাই, তারা আজিমপুর মেটারনিটি থেকে বের হয়ে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। পরে আমি তাদের গাড়িতেই ঢামেকে চলে আসি। সেখানে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগ হয়ে দুপুর ২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে শিশু বিভাগে নেওয়া হয়।’
সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দুপুর পৌনে ২টার দিকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর পর পর ডে-কেয়ারের লোকজন কেটে পড়েন বলেও জানান শিশুটির মা।
শিশুটির মা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার সুস্থ সন্তানকে রেখে গেলাম ওই ডে-কেয়ারটিতে, পেলাম মৃত অবস্থায়। এই মৃত্যুর দায় ওই সেন্টারটিকে নিতে হবে। শুনেছি সে ডে-কেয়ারে বালতির পানিতে পড়ে গিয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর মাস খানেক আগেও ডে-কেয়ারের স্টাফদের বিরুদ্ধে আমি অবহেলার অভিযোগ করেছিলাম। আমার ছেলের পিঠে কামড়ের দাগ ছিল, কীভাবে হয়েছে জানি না। পরে তারা এ নিয়ে কী করেছে, তা আর জানতেও পারিনি।’
শিশুটির বাবা হাকিবুল হাসান বলেন, ‘ডে-কেয়ারে সন্তানদের রেখে যাই, নিরাপত্তায় থাকবে। সার্বক্ষণিক টেককেয়ারে থাকবে। তারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। যারা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, তারা কেন পালিয়ে গেছে? পরে ডে কেয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের ফোন করায়, তারা হাসপাতালে এসেছেন। পরে ডে-কেয়ার সেন্টারের ঊর্ধ্বতনরাও হাসপাতালে ছুটে আসেন।’
অন্যদিকে শিশুটি কীভাবে মারা গেছে— এ প্রশ্নের উত্তর ওই প্রতিষ্ঠানের কারও কাছে পাওয়া যায়নি। তবে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা লোকজন বলছিলেন, শিশুটি বিছানা থেকে পড়ে গিয়েছিল বলে তারা শুনেছেন।
আজিমপুর ডে-কেয়ারে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ শুনে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার হেলাল উদ্দিন ঢামেক হাসপাতালে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিশুটির পরিবারের অভিযোগ শুনে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।’