ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি। যাদের ছিনিয়ে নেওয়া হবে তাদেরকে আদালতে অবগতও করেন তিনি।মেহেদীর পরিকল্পনায় ছিল হাজিরা দিতে আসা ১২ জঙ্গির ভেতর ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া।
বুধবার ২৩ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে অমিকে (২৪) গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
সিটিটিসি জানায়, ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের মোহাম্মদপুরের যে মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলো, সেই একই মামলায় অমিও আসামি। কিন্তু অমি জামিনে থাকায় বাইরে থেকে আসামি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় অংশ নেন। যাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাদের সঙ্গে একই সময় হাজিরা দেওয়ার সুযোগে তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অবগত করেন অমি। এমনকি ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের হাতখরচের অর্থও আদালতে সরবরাহ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ২৪ নভেম্বর দুপুরে রাজজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় আসামি অমি। তিনি সংগঠনে রাফি হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সাল থেকে সে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে হিজবুত তাহরীরে যুক্ত ছিলেন। সরকার বিরোধী অপতৎপরতার কারণে ২০১০ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১১ সালে জামিনে বের হয়ে আনসার আল ইসলামে উজ্জীবীত হয়ে ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। তখন সংগঠনের নাম ছিলো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। অল্প দিনের মধ্যে অমির দক্ষ নেতৃত্বের কারণে তাকে আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের দাওয়া বিভাগের প্রধান করা। এরপর অমি সিলেট অঞ্চলের অনেককে সংগঠনে নিয়োগ দেয়। দক্ষ নেতৃত্ব, সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ ও অতি সাহসী কর্মী হিসেবে সে সংগঠনের মূল ব্যক্তি বহিস্কৃত মেজর জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। এরপর অমিকে সংগঠনের আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অমির মাধ্যমে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি মাইনুল হাসান শামীমকেও আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ১৬ সালে যখন ব্লগার হত্যাসহ বেশকিছু ঘটনা সংগঠিত হয়। তখন সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর-বাড্ডা এলাকায় তাদের আস্তানা পাওয়া যায়। সে সময় অমিকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৭ সালে অমি জামিনে আবার আবার ছাড়া পায়। জামিন পাওয়ার পর থেকে সে নিয়মিত হাজিরা দিতো, এর ফলে বন্দি থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলো। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও তার নিয়মতি যোগাযোগ ছিলো। যখন আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিরিকল্পনা হয়, তখন অমির মাধ্যমে বন্দি জঙ্গিদের অবগত করা হয়। যারা ছিনিয়ে নিবে তাদের সঙ্গেও সমন্বয় করেন অমি। তারই অংশ হিসেবে ২০ নভেম্বর এ ঘটনা ঘটে।
সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, মামলায় হাজিরা দেওয়ার সময় অমি বেশকিছু নহদ অর্থ সঙ্গে নিয়ে আসতো। যা বন্দিদের বিভিন্ন খরচ নির্বাহের জন্য সরবরাহ করতো। ঘটনার দিন ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদেরও খরচের জন্য কিছু অর্থ দেয় সে। তাকে রিমান্ডে এনে টাকার উৎসের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের বিষয়ে তিনি জানান, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলে আমরা গ্রেপ্তার করবো এবং আপনাদের জানাবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য ১২ জঙ্গিকে আনা হয়। সেখান থেকে ৪ জনকে ছিনতাইয়ের পরিরিকল্পনা ছিলো। বিষয়টি ৪ জঙ্গিই জানতেন। তাদের প্রধান প্রাইয়োরিটি ছিলো আরাফাত এবং দ্বিতীয় ছিলো শামীম। শামীমকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও আরাফাতকে আটকে রাখতে সক্ষম হয় পুলিশ। আনসার আল ইসলাম কাটআউট পদ্ধতিতে তাদের অপারেশনগুলো সম্পন্ন করে। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে। ছিনতাইয়ের বিষয়টি ৪ জঙ্গিই জানতো। এর বাইরে আর কেউ জানতো কি-না আমরা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। হয়তো এই বিষয়টি কারাগারের ভেতর থেকেও জানতে পারে অথবা হাজিরা দেওয়ার সময়ও জানতে পারে। ওই ৪ জঙ্গিকে একসঙ্গে আনা কিংবা একসঙ্গে হ্যান্ডকাফ পরানোর বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে কারো অবহেলা বা গাফিলতি রয়েছে কি-না এগুলো যাচাইয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা শুধু অপারেশনাল বিষয়গুলো দেখছি। জামিনে থাকা জঙ্গিদের মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে মনিটরিং করি। তারা ঘরে বসেও গোপন অ্যাপসের মাধ্যমে কাজটি করতে পারে। আমরা কিছুদিন আগে দুইজন ডাক্তারকে ধরেছি, যারা প্রত্যাহিক স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেই বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। জামিনে থাকা জঙ্গিরা হুমকি কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিস্ক অবশ্যই রয়েছে। রিস্কটা মাথায় রেখেই আমরা তাদেরকে মনিটরিং অব্যাহত রাখি।
ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে না পারা প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আনসার আল ইসলাম সবচেয়ে বেশি কাট আউট সিস্টেম ফলো করে। এটা ব্রেকডাউন করতে একটু সময় লাগে, একটু সময় দেন। জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ অনেক জটিল বিষয়। এটা সাধারণ অপরাধ বা খুনের সঙ্গে মেলালে হবেনা। ৫-১০ দিনের বিষয় এখানে অবান্তর। মেজর জিয়ার অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার অবস্থান জানলে গ্রেপ্তার করবো। অবস্থান জানা মাত্র অভিযান পরিচালনা করা হবে। তার অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। অমিকে রিমান্ডে এনে বাইরে কারা ছিলো, ভেতরে কোন প্রস্তুতি ছিলো কি-না অথবা যতো ধরনের প্রশ্ন সামনে আসে এর সবকিছু আমরা জানার চেষ্টা করবো।