আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের টাইমড-আউট হওয়া নিয়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে তুমুল আলোচনা থামছেই না। আইসিসির বিশ্বকাপ নীতিমালা অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কান ব্যাটার ক্রিজে এসে ২ মিনিটের মধ্যে কোনো বল মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত না হওয়ায় এমন আইনসিদ্ধ আউট হয়েছেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্য অনেক খেলাতেও রয়েছে এমন টাইমড-আউটের নিয়ম।
ফুটবল: আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের (আইএফআইবি) প্রণীত আইনগুলো বেশ স্বচ্ছ। খেলোয়াড়রা হাফ-টাইমে একটি বিরতি পাবেন। অবশ্যই তা ১৫ মিনিটের বেশি নয়। অতিরিক্ত সময়ে হাফ-টাইমের ব্যবধানে একটি ছোট পানি পানের বিরতি পাবেন, যা এক মিনিটের বেশি নয়। শুধুমাত্র রেফারির অনুমতি নিয়ে হাফ-টাইমের সময় পরিবর্তন করা যাবে।
টেনিস: পয়েন্ট এবং গেমের মধ্যে, এমনকি মেডিকেল টাইমআউটের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় অনুমোদন দেয়া থাকে টেনিসে।
উদাহরণস্বরূপ, পয়েন্টগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ২৫ সেকেন্ডের অনুমতি রয়েছে, যা সার্ভ এবং রিসিভ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। এরমধ্যে সার্ভারের প্রস্তুত হওয়ার জন্য সময় থাকতে পারে (বল বাউন্স করা ইত্যাদি) এবং শট ক্লক পূরণ করার দায়িত্ব সাধারণত তাদের উপর থাকে।
রিসিভারকে অবশ্যই এ সময়ের মধ্যে নিজের অবস্থানে প্রস্তুত থাকতে হবে। খেলার শেষে যখন খেলোয়াড় পরিবর্তন হয়, তখন তোয়ালে ব্যবহার করার সময় এবং হাইড্রেশনসহ সর্বাধিক ৯০ সেকেন্ডের অনুমতি দেয়া হয়।
যদি সময়ের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়, প্রথমবার সতর্ক করা হয়। প্রতিটি অতিরিক্ত লঙ্ঘনের জন্য নিয়ম ভঙ্গকারী খেলোয়াড়কে একটি পয়েন্ট পেনাল্টি দেয়া হয়। এটি সাধারণত আম্পায়ারের বিবেচনার ভিত্তিতে হয়। তবে ২০১৮ সালে কোর্টে একটি দৃশ্যমান শট ঘড়ি চালু করা হয়েছিল। এটি আম্পায়ার এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে পরে বেশ কয়েকটি তুমুল ঝগড়ার কারণ হয়েছে।
২০১৯ সালে ইউএস ওপেনে ছেলেদের এককের ফাইনালের সময় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনাগুলোর একটি ঘটেছিল। দানিল মেদভেদেভের বিপক্ষে সার্ভ করার সময় খুব বেশি সময় নেয়ায় পেনাল্টির শিকার হন রাফায়েল নাদাল। যদিও পাঁচ সেটের মহাকাব্যিক সেই ফাইনাল নাদালই জিতেছিলেন।
হকি: হকিতে পেনাল্টি কর্নার এবং পেনাল্টি শ্যুটআউটের ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি পেনাল্টি শ্যুটআউটে শট নেয়া দলের হিট শেষ করার জন্য ৮ সেকেন্ড সময় থাকে। ৮ সেকেন্ডের মধ্যে শট নিতে ব্যর্থ হলে, হুটারটি বন্ধ হয়ে যায় এবং আর শটটি হিসাব করা হয় না।
পেনাল্টি কর্নারের সময় শট নেয়া এবং আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টার থাকা উভয় দলই তাদের খেলা অবস্থান গোছানোর জন্য ৪০ সেকেন্ড সময়সীমা পায়। যদি দলগুলো সময়সীমা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আম্পায়ার পেনাল্টি কর্নার কেড়ে নিয়ে শট নিতে যাওয়া দলকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বা দলটি লাইনআপ সাজাতে খুব বেশি সময় নিলে ডিফেন্ডারকে পেনাল্টি কর্নারের সময় ডিফেন্স পজিশন থেকে সরে যেতে নির্দেশ দিতে পারেন।
রাগবি: ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাগবি আইনে একটি সময়সীমা যুক্ত করা হয়েছিল। পয়েন্ট-স্কোরিং বিকল্প হিসেবে কিক করার সময়কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দুটি আইন সংশোধন করা হয়েছে।
৮.৮ডি ধারা মোতাবেক, কিকার চেষ্টা করার সময় থেকে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে খেলার সময় কিক নেয়। এমনকি যদি বলটি উপরে উঠে যায় এবং আবার স্থাপন করতে হয়। এক্ষেত্রে কিক অনুমোদিত নয়।
পেনাল্টি কিকের ৮.২১ ধারায় বলা হয়েছে, কিকটি অবশ্যই ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে নিতে হবে খেলার সময়। যখন থেকে দলটি তাদের উদ্দেশ্য ইঙ্গিত করে, এমনকি যদি বলটি উপরে উঠে যায়, তখন আবার বল স্থাপন করতে হয়। এ সময় কিক অনুমোদিত নয় এবং একটি স্ক্রাম প্রদান করা হয়।
আইনের এই দুই ধারা অনুযায়ী, সময়ের সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি আক্রমণকারী দলগুলোকে পয়েন্ট স্কোর করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।
কুস্তি: কুস্তিতে একটি প্যাসিভিটি ঘড়ির ধারণা রয়েছে। এখানে একজন কুস্তিগীর যিনি কুস্তি এড়িয়ে চলেন এবং কোনো হোল্ড বা ট্যাকল করার কোনো চেষ্টা করেন না, তাকে প্রথমে রেফারি একটি মৌখিক সতর্কবাণী দেন। যদি কুস্তিগীর ম্যাটে নিষ্ক্রিয় থাকেন, তাহলে রেফারি বাউটটি বন্ধ করে দেন এবং কুস্তিগীরকে প্যাসিভিটি ক্লক-এ রাখেন। ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিংয়ের নিয়ম বইয়ের ৪৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ৩০ সেকেন্ড সময়কালের মধ্যে কুস্তিগীরকে বাধ্যতামূলকভাবে একটি পয়েন্ট স্কোর করতে হবে।
যদি কুস্তিগীর ৩৯ সেকেন্ডের মধ্যে একটি পয়েন্ট স্কোর করেন, তাহলে কোনো অতিরিক্ত পয়েন্ট দেয়া হবে না। কোনো কুস্তিগীর একটি পয়েন্ট স্কোর না করেন, তাহলে প্যাসিভিটি ক্লক-এ রাখা কুস্তিগীরের প্রতিপক্ষকে একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট দেয়া হবে। প্যাসিভ রেসলিংয়ের ফলে প্রদত্ত শাস্তির জন্য কোনো চ্যালেঞ্জের অনুরোধ করা যাবে না।
কোনো কুস্তিগীর প্রথম পিরিয়ডের শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে যদি একটি পয়েন্ট স্কোর না করেন, তাহলে রেফারিদের বাধ্যতামূলকভাবে একজনকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। যখন উভয় সময়সীমার মধ্যে ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময় বাকি থাকে, যদি রেফারি বডির তিনজনই সম্মত হন যে, একজন কুস্তিগীর তার প্রতিপক্ষকে এড়িয়ে যাচ্ছেন অথবা ব্লক করছেন, তাহলে তার প্রতিপক্ষকে এক পয়েন্ট এবং সতর্কতা দেয়া হয় (অর্থাৎ হোল্ড থেকে পালিয়ে যাওয়া)। এই পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।
যখন একটি বাউটে ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময় বাকি থাকে এবং রেফারি বডি সর্বসম্মতভাবে সম্মত হন যে একজন কুস্তিগীর প্যাসিভ, তখন তারা পালানোর জন্য কুস্তিগীরকে সতর্কতা জারি করতে পারেন এবং একটি পয়েন্ট তার প্রতিপক্ষ পায়। এই পয়েন্টটি দিয়ে ম্যাচের বিজয়ী নির্ধারণ করা যায়। তবে হারের দিকে যাওয়া কুস্তিগীর চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
গ্রেকো-রোমান কুস্তিতে, সক্রিয় কুস্তিগীরকে একটি পয়েন্ট দেয়া হয় যদি তার প্রতিপক্ষকে নিষ্ক্রিয় বলে পাওয়া যায়। সক্রিয় কুস্তিগীরও দাঁড়ানো বা পার টেরে (ম্যাটে) অবস্থানে বাউট চালিয়ে যাবেন কিনা, তা বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে।