পেশাদার খেলায় ২০২৭ সালের মধ্যে সাউথ এশিয়ার খেলোয়াড়দের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অংশগ্রহণ অংশগ্রহণ এবং উপস্থিতি বাড়ানোর সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ।
বর্তমানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও বিগ ব্যাশ লিগে শতকরা ৪.২ ভাগ ক্রিকেটার সাউথ এশিয়ার বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় রয়েছেন। সংখ্যাটিকে বাড়িয়ে শতকরা ৮ ভাগে উন্নীতের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একইসঙ্গে সাউথ এশিয়ার বংশোদ্ভূত দর্শকদের সংখ্যাও বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া ক্রিকেট ম্যাচে এক থেকে দুই লাখ সাউথ এশিয়ার শিকড় থাকা দর্শক গ্যালারিতে হাজির হন। গত বছর ছেলেদের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৯০ হাজারেরও বেশি দর্শক উপস্থিত ছিল।
সাউথ এশিয়ার বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারদের মধ্যে উসমান খাজা, আলানা কিং এবং লিসা স্থালেকার কর্মপরিকল্পনাকে বাস্তবায়নে মূল ব্যক্তিত্ব হিসেবে কাজ করছেন। শুক্রবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এ কর্মপরিকল্পনা চালু হয়।
খাজা বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কী করতে পারি, আমি কী উত্তরাধিকার রেখে যেতে চাই এবং আমি আসলে এই খেলাটিকে ভালো অবস্থানে রাখতে কী করতে পারি। আমি যখন অস্ট্রেলিয়া দলের বাইরে ছিলাম, তখন এসব ভেবেছিলাম। আমাদের অস্ট্রেলিয়ায় সাউথ এশিয়ার এবং বহু-সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের অনেক বেশি অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে আমরা কখনোই অস্ট্রেলিয়ার ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট দলে তাদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখতে পাই না। বিশেষ করে ছেলেদের দলে গত ১০০ বছরে বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।’
‘ব্যক্তিগতভাবে আমি অনুভব করেছি, আমাদের ব্যাপারগুলো একটু ভিন্নভাবে করা দরকার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সবসময় বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দারুণভাবে সমর্থন যুগিয়ে গেছে। তবে এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়।’
৩৭ বর্ষী ক্রিকেটারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের কেউ কীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় কোচ হতে পারেন। এ সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ঠিক নিশ্চিত নই। কারণ আপনি যদি অতীতের খেলোয়াড় না হন বা চলমান ধারায় না থাকলে এই ধারাটি ভাঙা খুব কঠিন। মূল সমস্যা হলো, দীর্ঘকাল ধরে অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট খুবই সাদা চামড়ার মানুষদের আধিপত্য দেখানো খেলা।’
পাকিস্তানে জন্ম নেয়া খাজা পাঁচ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেন। ছোট থেকে বড় হওয়ার সময় সতীর্থদের সাথে সম্পর্ক রাখতে তাকে লড়াই করতে হয়েছিল। কোচরাও তার এসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া নিয়ে বুঝতে চাইতেন না। এসব প্রতিকূলতা দূর করতে খেলাধুলাই তাকে সাহায্য করেছিল। ক্রিকেট বোর্ড থেকে শুরু করে স্টাফ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকা অত্যাবশ্যক ছিল বলেই তিনি মনে করেন।
‘আমাকে বলা হয়েছিল, আমি বড় হয়ে অলস ছিলাম। একটি কুসংস্কার ছিল যে, উপমহাদেশের ক্রিকেটাররা যথেষ্ট চেষ্টা করে না। এমন ধারণা ভাঙার কোনো উপায় ছিল না। আমার সব কোচ ও নির্বাচকরা সাদা চামড়ার অস্ট্রেলিয়ান। তারা সত্যিই আমাকে কিংবা আমার সংস্কৃতিকে বোঝেননি।’
‘একজন মুসলিম হিসাবে রোজা পালন করছি। নিউ সাউথ ওয়েলসে আমি কী করছি, এ ব্যাপারে কারোরই ধারণা ছিল না। খালি চোখে আপনি মনে করেন ‘উজি (উসমান) যথেষ্ট কঠোর অনুশীলন করছে না, যথেষ্ট পরিশ্রম করছে না। আমি সারাদিন খাইনি বা কিছুই পান করিনি এবং রান্না করেছি। কিন্তু আমরা ফিটনেস সেশন করছি এবং আমি এখনও সেখানেই আছি। হ্যাঁ, আমি পিছিয়ে আছি কিন্তু এখনও কাজ করছি। সুতরাং উপমহাদেশীয় শিকড় থাকা কেউ দায়িত্বএ আসলে এমন ছোটখাটো ভুল ধারণাগুলো ভেঙে ফেলতে পারে।’