অভাব-অনটনে খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথাও ভাবছিলেন মারুফা আক্তার। করোনাকালে বাবার সঙ্গে করেছিলেন হালচাষ। জীবন যুদ্ধের লড়াই চালিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সে জাতীয় দলে ডাক পান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিটাও এবার পেলেন কৃষক বাবার সন্তান। ক্রিকইনফোর চোখে হয়েছেন ২০২৩ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে পারফর্মার।
গত বছরের ১৬ জুলাই মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে মেয়েদের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৫২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় মারুফার বোলিং তোপে কুপোকাত হয়ে টিম ইন্ডিয়া মাত্র ১১৩ রানে গুটিয়ে যায়। বৃষ্টি আইনে বাঘিনীদের ৪০ রানের দারুণ জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখা মারুফা সেদিন ৭ ওভারে ২৯ রান খরচায় পান ৪ উইকেট, হন ম্যাচসেরা। ডানহাতি পেসারের সেই পারফরম্যান্সকে ক্রিকইনফো দিয়েছে বর্ষসেরার স্বীকৃতি।
২০২৩ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সিরিজে উইকেটহীন ছিলেন মারুফা। যদিও তার ক্রিকেটীয় সামর্থ্য নিয়ে দলের মধ্যে সন্দেহ ছিল না বললেই চলে। বল হাতে উইকেট পাওয়াটাও যেন ছিল বাকি।
ভারতের সঙ্গে নজরকাড়া সেই বোলিংয়ে নিজের তৃতীয় ওভারে ওপেনার স্মৃতি মান্ধানাকে সাজঘরে ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পান। উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছিলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ১১ রান করা ভারতের তারকা ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানার উইকেটটি ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর আরেক ওপেনার প্রিয়া পুনিয়ার উইকেটও তুলে নেন। আমনজোত কৌরকেও উইকেটরক্ষক নিগার সুলতানা জ্যোতির গ্লাভসে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মারুফা। পরে দারুণ এক ইয়র্কারে স্নেহ রানার লেগ স্টাম্প উড়িয়ে দেন।
মারুফার সেদিনের কীর্তিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো জয়ের স্বাদ পায়। ১৯ বর্ষী পেসারই ওয়ানডে ফরম্যাটে প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে ৪ উইকেট দখলের নজিরও গড়েন।
টিম টাইগ্রেসের কোচ হাসান তিলকারত্নের কন্ঠে জীবন যুদ্ধে জয়ী মারুফার উপর দলের আস্থার কথা জানান। ভারত বধের স্মৃতিচারণে অকপটেই বললেন, ‘সে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন। ভারতীয় ব্যাটাররা স্পিনারদের খুব ভালোভাবে সামলাচ্ছিল। তাই আমরা মোমেন্টাম ভাঙতে চেয়েছিলাম। পরের ইনিংসে তাই আমাদের মারুফাকে দিয়ে বল করানোর এটি একটি কারণ ছিল।’
নিগার সুলতানা জ্যোতির কণ্ঠে ছিল সতীর্থের সামর্থ্যের প্রশংসা। লাল-সবুজের দলের অধিনায়কের ভাষ্য, ‘মারুফা খুব মেধাবী, তরুণ এবং সতেজ। সে আমার কাজ সহজ করে দেয়। খুব বেশি চিন্তা করে না এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করে।’