জমে উঠেছে বাণিজ্য মেলা। অন্যান্য সব স্টলের মত ‘বাংলাদেশ জেল কারা পণ্য’ নামক একটি স্টলে দেখা যাচ্ছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পরিচিত কিংবা নামিদামী ব্র্যান্ডের না হলেও দেশীয় পণ্য নিয়ে সাজানো স্টলটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কারণ কারাগারের ভিতরে বন্দি থাকা আসামীরা নিজের হাতে তৈরি করেছেন এসব পণ্য।
বাংলাদেশ সরকারের কারা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত ‘বাংলাদেশ জেল কারা পণ্য’ স্টলটিতে পাওয়া যাচ্ছে ঝাড়ু, মোড়া, ব্যাগ, লুঙ্গি, বিস্কুটসহ অনেক হাতে বানানো পণ্য। কারাবন্দিদের হাতে তৈরি পণ্যগুলো দেখতেই যেন দলে দলে ভিড় করছে মানুষ। ভিন্নধর্মী এই স্টলটিতে প্রায় ৪০০ ধরণের পণ্য উঠেছে এবারের বাণিজ্য মেলায়। সবগুলোই নিজের হাতে তৈরি করেছেন জেলের ভিতরে থাকা বন্দিরা। বিক্রির একটি লভ্যাংশ তুলে দেওয়া হবে তাদের হাতে। কারাগারে থাকাকালীন সময় বন্দিরা যেন নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন সেই প্রচেষ্টারই একটি অংশ এই কারা পণ্য স্টলটি।
বাণিজ্য মেলার ‘জেল কারা পণ্য’ স্টলটির দায়িত্বে থাকা একজন জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার- কারাগার হবে সংশোধনাগার’ এই উদ্দেশ্য নিয়ে কারা বিভাগ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ৬৮টি জেলার কারাগার থেকে পণ্যগুলো সংগ্রহ করে আমরা এগুলা প্যাভিলিয়নে সাজিয়েছি এবং বেশ সাড়া পাচ্ছি, বিক্রিও হচ্ছে। কারা অভ্যন্তরে থাকা বন্দিদের প্রায় ৪০০ ধরণের পণ্য নিয়ে তৈরি এই স্টল। বন্দিদের দক্ষতার উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রতিটি কারাগারে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে বন্দিরা এসব পণ্য উৎপাদন করেছে।
পণ্যগুলো সাধারণত হস্তশিল্প। পণ্য তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ধরণের দেশীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর বন্দিরা দেশীয় কাঁচামালকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন পণ্য। বিক্রির টাকা থেকে এর ৫০ শতাংশ বন্দিদের দেওয়া হবে যা তারা নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন, পাঠাতে পারবেন পরিবারের সদস্যদের কাছে। বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
বাণিজ্য মেলা ছাড়াও প্রতিটি কারাগারের সামনে কারাস্টল এবং কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে বন্দিদের তৈরি এসব পণ্য প্রদর্শণ এবং বিক্রি করা হয়। তবে রাজধানীতে এমন দেশীয় পণ্যের সমাহার নিয়ে শো-রুম দেখতে চাচ্ছেন ক্রেতারা, দামটা হাতের নাগালে থাকায় ‘বাংলাদেশ জেল কারা পণ্য’ নিয়ে বেশ উৎসাহী তারা। রাজধানী ঢাকায় কোন শোরুম দেওয়ার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি তবে ভবিষ্যতে দেওয়া হতে পারে বলে জানান বাণিজ্য মেলার ‘জেল কারা পণ্য’ স্টলটির দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
পণ্যগুলো হাতে নিয়ে অনেকটা অবাকই হতে হয়। যেন নিপুণ হাতে বানানো হয়েছে এগুলো। যেই হাতে হয়ত কোন এক সময় হয়েছিল অপরাধ সেই হাতই এখন তৈরি করছে মনোরম পণ্য। কারাবন্দিদের এমন সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটা, তাদের জন্য যেন আসলেই আশীর্বাদ। কাজ শিখছেন, পণ্য তৈরি করতে পারছেন, সেগুলো বিক্রি হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের ঘরে ঘরে। উপার্জন করতে পারছেন অর্থ। হয়ত কারাজীবন শেষে এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে গুছিয়ে নিতে পারবেন নিজেদের ভবিষ্যত।