
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এবার ভেসে এলো সামুদ্রিক বর্জ্য। প্লাস্টিকের বোতল, খড়, নাস্তার প্যাকেট, ছেঁড়া জাল, কাঁচের বোতল, প্লাস্টিকের দড়িসহ অনেক বর্জ্য সৈকতে ভেসে এসেছে। এসব বর্জ্য পর্যটকের হাঁটতে বিঘ্ন ঘটছে। তবে ময়লা আবর্জনা প্রতিনিয়ত পরিস্কার করছেন পরিচ্ছনতাকর্মীরা। প্রশাসন বলছে কালবৈশাখীর কারণে এসব বর্জ্য ভেসে আসছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এগুলো ভিনদেশি বর্জ্য, সাগর থেকে তীরে ভেসে আসছে।
সৈকতের নাজিরের টেক পয়েন্ট থেকে দরিয়া নগর পর্যন্ত এসব বর্জ্য দেখা যাচ্ছে। এ কারণে হাঁটাচলা করতে পারছে না পর্যটকরা। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পরিচ্ছন্নকর্মীরা আবর্জনাগুলো পরিষ্কার করছে।
পরিচ্ছন্ন কর্মী নুরুল হাকিম বলেন, বর্জ্য আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা গত তিন দিন ধরে এগুলো পরিষ্কারের চেষ্টা করছি। প্রতি জোয়ারে আসছে বর্জ্য। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় শিশুদেরও জ্বালানি সংগ্রহের জন্য এগুলো পরিষ্কার করতে দেখা যায়।
কলাতলী থেকে আসা শিশু নুরুল আমিন জানায়, সৈকতে বর্জ্য ভেসে আসার খবর পেয়ে লাকড়ি জ্বালানোর জন্য বর্জ্য থেকে প্রয়োজনীয় কাঠ, প্লাস্টিক সংগ্রহ করছি।

সৈকতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখীর কারণে যে ময়লা আবর্জনাগুলো সাগরে গেছে সেগুলো ভেসে আসছে। তবে আমরা পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নকর্মী রেখেছি, যাতে এগুলো পরিষ্কার করা যায়।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার পারভেজ বলেন, আমরা ইতোপূর্বে লক্ষ্য করেছি যে বিভিন্ন সময়ে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর হতে মহেশখালির বিভিন্ন দ্বীপসহ সোনাদিয়া দ্বীপে এসে জমা হয়।
তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা সমুদ্রে নিম্নচাপ, বায়ুপ্রবাহ, পানির ঘূর্ণন (এডি), সমুদ্রের পানির গতি প্রবাহসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের ধরন উপর ভিত্তি করে সমুদ্র উপকূলের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ভাসমান প্লাস্টিকসহ অন্যান্য বর্জ্য জমা হয়।
বিজ্ঞানী বেলাল হায়দার পারভেজ বলেন, সমুদ্রে আমরা একটি নিম্নচাপের অবস্থান লক্ষ্য করেছি, এসব নিম্নচাপের জোয়ারের সময় সমুদ্র উপরিপৃষ্ঠের পানি অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়ে ফুলে উঠে এবং ঘুর্ণনের ফলে সমুদ্রের ভাসমান প্লাস্টিক বর্জ্য একসঙ্গে জমা হয়ে ভেসে আসে সমুদ্র সৈকতে। মানুষের ব্যবহার্য প্লাস্টিক বর্জ্য, মাছ ধরার জাল, জালের ফ্লোট, কাঁচের বোতল, ফোম, রশিসহ হাজার হাজার টন বর্জ্য সমুদ্র সৈকতে এসে জমা হয় এবং কক্সবাজার উপকূলে অবস্থিত বিভিন্ন লতা, গুল্ম, ও ম্যানগ্রোভের সঙ্গে আটকা পরে। বর্তমানে এটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের টেরেসস্ট্রিয়াল মাইক্রোপ্লাস্টিক -এর উৎসে পরিণত হয়েছে। সমুদ্র কূলের যে সব জায়গার ভেজিটেশন লাইন ও ওয়াটার লাইনের দূরত্ব বেশি সে জায়গার লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করে জোয়ারের পানি আসতে না পারায় প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো প্রায়ঃশই দরিয়ানগর থেকে শুরু করে সোনাদিয়া-মহেশখালী সমুদ্র কূলে আটকা পড়ে। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি এসব প্লাস্টিককে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক এ পরিণত করে।
তিনি আরও বলেন, অনিতিবিলম্বে এই বর্জ্য অপসারণ না হলে সৃষ্ট মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে মানুষের জন্য বিশাল স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে উঠবে। বর্জ্য ভেসে আসার কারণ আরও বিশদভাবে জানার জন্য বে অব বেঙ্গলের সিজনাল এডি ফরমেশন (পানির ঘূর্ণন), বায়ুপ্রবাহের গতি ও দিক এবং কক্সবাজার কোস্টাল এলাকার বটম ট্রপগ্রাফির ওপর গবেষণা দরকার।
সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা এসব বর্জ্যের উৎস জানতে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুটি ইরাবতী ডলফিন ভেসে আসে। সেই সঙ্গে কয়েকদিন আগে অনেকগুলো মৃত জেলেফিস ও এসব পয়েন্টে ভেসে এসেছিল। এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে গবেষকরা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সমুদ্র বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার পারভেজ।