সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা, দুর্নীতিবাজরা, অর্থ পাচারকারীরা, লুটেরা ও দুর্বৃত্তরা। এ শ্রেণির গোষ্ঠীটি সর্বত্রই দেশকে নিয়ে দেশের মানুষদের নিয়ে মিথ্যার বেসাতি রচনা করেছে, সত্যর আড়ালে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ষড়যন্ত্রের জাল ফেলে তারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি দিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে, সুযোগটিকে লুফে নিয়েছে এবং নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে কিংবা ক্ষমতার মসনদে ছড়ি ঘুরিয়েছে। আবার এও স্বীকার করতে হবে বাংলাদেশের কিছু মানুষজন এদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করে।
অন্যদিকে একটি বিশেষ শ্রেণি রয়েছে যারা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে, দেশের বিরুদ্ধে; সরকারের বিরুদ্ধে অপতথ্য ও মিথ্যা তথ্যের মিশেলে বাংলাদেশকে খাটো করে বিদেশে সামান্য সুযোগের আশায় কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালালেই বিদেশে তাদের স্থায়ী নাগরিকত্বের পাশাপাশি পরবর্তীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নানাবিধসুযোগের নিশ্চয়তা রয়েছে। অথচ তারা এ দেশের মাটির ঘ্রাণে বড় হয়েছে, একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণ করেছে।
এখন যখন দেশকে দেবার সময় এসেছে সে সময় বিপরীত রূপ ধারণ করে দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোতে তৎপর। তারা মনে করে বিদেশীদের নিকট দেশকে খাটো করতে পারলেই নিজস্ব সুবিধার পাল্লা কিছুটা হলেও ভারী করা যাবে। এ হীন প্রচেষ্টা থেকেই তাদের অন্তহীন প্রচেষ্টা। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে এবং রাজনীতিতে তারা অত্যন্ত সংকটকালিন সময় পার করছে।
এ ধরনের একটি শ্রেণি কিন্তু ইতিমধ্যে দাঁড়িয়েছে যেখানে দেখা যায় বিদেশে বসে তারা দেশবিরোধী কনটেন্ট তৈরিতে ব্যস্ত। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এ দেশে যারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে তারাও সেসব কনটেন্ট ভিডিওকে সমর্থন প্রদান করে। সরকারের সকল কাজকে আপনি প্রত্যাখান করতে পারেন না। একটি সরকার দেশ পরিচালনা করতে যেয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে সাধুবাদ জানাতে হবে আবার নেতিবাচক সিদ্ধান্তের জায়গায় সরকারের বিরোধিতা করতে হবে। মিডিয়ার দৃষ্টিতে বাংলাদেশে যে বিরোধী দলগুলো রয়েছে তারা সরকারের সকল কাজের বিরোধিতা করে থাকে। আচ্ছা বাংলাদেশের সরকার কি কোন ভাল কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করছে না? বিদেশে বসে যারা ইউটিউবে ব্লগ বানায় কিংবা কনটেন্ট তৈরি করে থাকে তাদের অধিকাংশই কনটেন্টও দেশবিরোধী।
বাংলাদেশে বসবাস করেও এসব কনটেন্ট অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে প্রকারান্তরে তাদেরকে সমর্থন করে।
আবার খেয়াল করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ যখন কিছুটা সংকটের মধ্য দিয়ে যায় তাহলে দেখা যায় সুযোগসন্ধানীরা তাদেরকে কার্যক্রমকে আরও জোরালো করতে উঠেপড়ে লাগে।
বিশেষ করে যদি কোন সন্ত্রাসীর ঘটনা ঘটে থাকে সেটিকে কিভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্রতায় উপনীত করা যায় সে বিষয়ে এ শ্রেণিটির অতিব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। হলি আর্টিজান হামলার পরে এসব ষড়যন্ত্রকারীরা নানাভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিল, যদিও সরকার ও জনসাধারণের ঐকান্তিক তৎপরতায় বিশ্ববাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে সরকার।
তথাপি এ চক্রটি এখনও উৎপেতে আছে কিভাবে বাংলাদেশকে ভিন্ন দেশের সামনে খাটো করা যায়, ছোট করা যায়, ভুলভাবে উপস্থাপন করা যায়। কাজেই এদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই, এখনই মোক্ষম সময় জবাব প্রদানের। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রকারীদের হোতাদের বিরুদ্ধে লালকার্ড দেখাতে হবে। খবরে জানা যায়, আমেরিকার পুলিশের হাতে একজন গ্রেফতার হয়েছে, যিনি গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারে তিনি সিদ্ধহস্ত।
ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন সময়ে একত্রিত হয়ে দেশের বিরুদ্ধে জনতাকে খেপিয়ে তুলতে মরণপণ চেষ্টা করে থাকে। তাদেরকে চিহ্নিত করা যেমন জরুরী ঠিক তেমনিভাবে ভবিষ্যতে যাতে কেউ ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতে না পারে সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা দেখেছি এবং জেনেছি বাংলাদেশ বিরোধীরা বাংলাদেশকে তাদের আখের গোছানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবার অপচেষ্টা করে থাকে। সময় এবং সুযোগ পেলেই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি সুচিন্তিত ভাবেই করে থাকে। যারা দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটায় তাদেরকে কোনভাবেই বিশ্বাস করবার সুযোগ নেই, তারা প্রকারান্তরে দেশদ্রোহী। মনে রাখতে হবে যারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের সঙ্গে কোন আপোস নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নামমাত্র বুদ্ধিজীবীদের আস্ফালন ও দৌরাত্ন দেখেছি। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কিভাবে বাঁধাগ্রস্থ করা যায় সে ব্যাপারে তাদের আপ্রাণ চেষ্টা আমরা লক্ষ্য করেছি। শুধু তাই নয়, বিদেশীদেরকে তারা উসকানি দিয়ে এ দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তারা বিদেশীদের নিকট ধরণা দিয়েছে।
ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু কখনোই থেমে ছিল না, এখনো থেমে নেই। হয়ত তাদের কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা রয়েছে কিন্তু তারা ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ নজরদারি রাখতে হবে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। বৈদেশিক রিজার্ভের সংকট জানিয়ে তারা বিবৃতি প্রদানের চেষ্টা করেছে। দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে সে মর্মেও তারা খবর ছড়িয়েছে।
করোনাকালিন সময়ে যেখানে মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখা গিয়েছে, সেই সংকটময় মুহূর্তেও তারা দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছে। এই বুঝি সরকারের পতন হতে যাচ্ছে, কখনো কখনো দেখা গেছে তারা সরকারের পতনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে আস্ফালন দেখা গিয়েছে, তারা বিচারকাজকে প্রভাবিত করতে বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করে বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে টেলিফোন করিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কারসাজি নিয়ে তারা বিভিন্ন ব্লগ ও পেইজে সংবাদ ছড়িয়েছে। এসবই মূলত তাদের ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতা নীতিকে সমর্থন জানিয়ে অনেক দেশই তাদের নীতিকে বাস্তবায়ন করেছে। সে জায়গায় বাংলাদেশের সম্প্রীতিকে নষ্ট করে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
ধর্মীয় কার্যাদি পালনের সময় হামলার ঘটনা যারা ঘটায় তারা আদতে দুষ্কৃতিকারী, দুর্বৃত্ত। আবার যারা রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে দেশের বাইরে অবৈধ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার করে তারা হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল। আবার হুন্ডির মাধ্যমে যারা টাকা পাচারের সাথে জড়িত তারা সকলেই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্য। ঋণ খেলাপিতে যুক্ত হয়ে দেশের বাইরে যারা ভবিষ্যৎ গড়তে চান তারা লুটেরা, দুর্নীতিবাজ।
এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আপামর জনসাধারণকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রচলিত আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান সকল পর্যায়ের দুর্নীতিকে প্রতিহত করার জন্য জিরো টলারেন্স নীতি প্রণয়ন করেছে। ষড়যন্ত্রকারী, লুটেরা, দুর্বৃত্তকারী, দুর্নীতিবাজ, হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল, সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্য প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রণয়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা সম্ভব।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)