বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংগঠন বিভাগের প্রধান, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আপোষহীন আজীবন বিপ্লবী কমরেড শামছুজ্জামান সেলিম মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গতকাল ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন কমরেড শামছুজ্জামান সেলিম। আজ ১৮ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে মোহাম্মদপুরে টার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
আজ বিকেল ৪ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত দেশের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পুরানা পল্টনস্থ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাখা হবে কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের মরদেহ।
এরপর তার জন্মভূমি ঈশ্বরদীতে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। ১৯ আগস্ট সকাল ১১ টায় ঈশ্বরদীতে তাকে গার্ড অফ আনার প্রদান করে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে।
ঈশ্বরদীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাবা, মা এবং স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
শামছুজ্জামান সেলিম ১৯৫০ সালের ২৭ অক্টোবর পাবনার সাধুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঈশ্বরদীতে স্থায়ী হন। সাঁড়া মাড়োয়ারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ইশ্বরদী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। পরে বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা একাডেমি থেকে সমাজবিজ্ঞান ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।
১৯৬৮ সালে কিশোর বয়সেই গোপন কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন। পার্টির নির্দেশে তিনি ১৯৬৯ সালের আগস্টে পাকশী পেপার মিলে শ্রমিকের চাকরি নেন এবং ১৯৭৩ সালে সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। পার্টির নির্দেশে ১৯৭৪ সালে পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার হন। দুই বছর পর মুক্তি পান। ৮০’র দশকের শেষে সিপিবি পাবনা জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিলোপবাদকে মোকাবেলা করে ১৯৯৩ সালে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে দু’দফায় তিনি পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। একইসাথে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্ৰীয় সংগঠন বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তিনি জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক একতায় নিয়মিত লিখতেন। ‘উৎসের সন্ধানে’ ও পার্টি সংগঠন বিষয়ে তার একাধিক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগ ছাড়াও হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতা স্বত্ত্বেও তিনি পার্টিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছিলেন।