চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পাগলা হাওয়ায় উত্তাল সেই রাত

কোক স্টুডিও বাংলার কনসার্ট

বছরের সবচেয়ে তারকাবহুল কনসার্টটি হয়ে গেল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাতে। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই কনসার্টটি মূলত ফিফা ট্রফির বাংলাদেশ ট্যুর উপলক্ষ্যে। আয়োজক কোক স্টুডিও বাংলা। যদিও দিনভর বৃষ্টির কারণে কনসার্ট আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বে ছিলেন খোদ আয়োজকরাই।

এক সময় কনসার্টটি স্থগিতেরও ঘোষণা আসে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে কোক স্টুডিও বাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাত ৮টায় হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই কনসার্ট!

দফায় দফায় এমন সিদ্ধান্ত বদল নিয়ে কটু মন্তব্যও কম দেখা যায়নি। কোক স্টুডিও বাংলার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নেতিবাচক মন্তব্য চোখে পড়ে। শেষ সময়ে এসে কনসার্টের আয়োজনের ঘোষণা দেয়ায় অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন, ‘দর্শক হবে তো!’

দিনভর বৃষ্টি এবং কয়েক দফায় সিদ্ধান্ত বদলের পর এমন সন্দেহ মোটেও অমূলক নয়। কিছুটা সন্দেহ নিয়েই আর্মি স্টেডিয়ামের দিকে যাত্রা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে দেখা গেলো পুরো ভিন্ন চিত্র! আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠ রীতিমত কানায় কানায় পূর্ণ। সাধারণ গ্যালারি থেকে ভিআইপি গ্যালারি, দর্শকে পূর্ণ। সুরে সুরে দূরে ভেসে বেড়ানোর উচ্ছ্বাসে অপেক্ষায় তারুণ্য! অন্তত তাদের প্রস্তুতির ভাষা ছিলো এমনই!

হলোও তাই। রাত ৮টার পর অনুষ্ঠান ঘোষকের কণ্ঠে যখন উচ্চারিত হলো শিল্পীদের নাম, তখন দর্শকের সেকি উচ্ছ্বাস! হাজারও দর্শকের জোর কড়তালিতে মুখরিত হয় আর্মি স্টেডিয়াম। আর হবেই বা না কেন, মহামারীর কারণে প্রায় দুই বছর এমন আয়োজন থেকে বঞ্চিত দর্শক। চলতি বছরে ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে কনসার্টের আয়োজন হচ্ছে বটে, কিন্তু এরকম বিরাট আয়োজনে আর তারকাবহুল কনসার্ট তো বিরল!

অনুষ্ঠানের শুরুতেই অর্ণবের নেতৃত্বে কোক স্টুডিও বাংলার সদস্যরা মঞ্চে আসেন। বাংলা ক্লাসিক ফিউসন দিয়ে শুরু। সমস্বর। বগা তালেবের কণ্ঠে ‘আমি কোথায় পাব তারে’, সঙ্গে অর্ণব ধরেন ‘একলা চলো রে’ শিরোনামহীন ব্যান্ডের ইশতিয়াক কণ্ঠে ধরেন ‘তুমি চেয়ে আছো তাই’। প্রথম পরিবেশনার ঠিক পরেই মঞ্চ কাঁপিয়ে তরুণ শিল্পী অনিমেষ রায় গেয়ে উঠেন কোক স্টুডিও বাংলার অন্যতম আলোচিত গান ‘নাসেক নাসেক’, সঙ্গে অভিজ্ঞ পান্থ কানাই। বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস খেলে উঠে দর্শকের মধ্যে।

এরপর প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা দর্শক মেতে থাকেন ভিন্ন সুর আর গায়কীতে। সুরের বিচিত্র ভুবনে দর্শক ভাসেন কখনও তাহসানের ‘আলো আলো’তে, আবার কখনও ব্যান্ড নেমেসিস কিংবা ওয়ারফেজের বিখ্যাত গানের পরিবেশনায়। মাঝখানে ‘প্রার্থনা’ দিয়ে মমতাজ মাতিয়ে যাওয়ার আগে দর্শককে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যান, সীতাকুণ্ড ট্রাজেডির কথাও। সবাইকে নিয়ে এক মিনিট নিরবতাও পালন করেন এই নেত্রী ও শিল্পী।

এদিকে ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার ঘর পেরিয়ে গেছে আগেই। অনুষ্ঠান ঘোষক এসে মজা করে বললেন, ‘অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম ৯ তারিখ, আর এখন ১০ তারিখ হয়ে গেলো! আমরা কি কনসার্ট শেষ করবো না?’

দর্শকের মুখে তখন ‘গুরু’ ‘গুরু’ রব! বুঝতে আর বাকি নেই, রাত প্রায় সোয়া ১২টার দিকে মঞ্চে পা রাখেন নগরবাউল জেমস। তারকাবহুল কনসার্টের মধ্যমণি তিনি। মঞ্চে এসে স্থির হওয়ার আগেই তার হাতে তুলে দেয়া হলো গিটার। কাঁধে নিয়ে গিটারের তারে আঙুল ছোঁয়ালেন! চারদিকে তখন হইহই রব।

প্রথমেই গাইলেন ‘তারায় তারায় রটিয়ে দেবো’। হালকা মেজাজের গান, তবু সেই রিদমে হাজারও কণ্ঠ মিলে মিশে একাকার আর্মি স্টেডিয়াম!

সবাই দুটি করে গান গাইলেও জেমস গাইলেন মোট চারটি গান। তবু শ্রোতা দর্শকের যেন মন ভরে না! পাগলা হাওয়ায় উত্তাল রাত তখন ১টা ছুঁইছঁই! তাতে কী,  ‘তারায় তারায় রটিয়ে দেবো’ ছাড়াও তিনি গাইলেন ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘পাগলা হাওয়া’র মতো ঝড়ো গান। শেষ করলেন তার গাওয়া হিন্দি ছবি ‘গ্যাংস্টার’র তুমুল জনপ্রিয় গান ‘ভিগি ভিগি’ দিয়ে!

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল