রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের পরে যে সাহিত্যিকের সাহিত্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র হয়েছে,তিনি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কমপক্ষে ৪৩ টি ছবি হয়েছে তাঁর সাহিত্য নিয়ে। যার মধ্যে নব্বই শতাংশ অসম্ভব রকম বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছে।
৩৬৫ দিন এর এক প্রতিবেদনে তারাশঙ্করের সাহিত্য নিয়ে সিনেমার আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, তারাশঙ্করের সাহিত্য থেকে শুধু মহানায়ক উত্তম কুমারই অভিনয় করেছেন ১৩টি সিনেমায়।
শুধু সাহিত্যেই নয়, তারাশঙ্করের বিচরণ ছিলো বিনোদন জগতেও। তালিকা অসম্পূর্ণ থাকলেও তাঁর লেখা কাহিনী থেকে অন্তত ৪৩টি সিনেমা নির্মাণ হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনা জানানো হয়। তার লেখা উপন্যাস ও গল্প সমৃদ্ধ করেছে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎকে।
সত্যজিতের প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ বাণিজ্যিকভাবে ঐতিহাসিক সাফল্য লাভ করলেও পরবর্তী ছবি ‘অপরাজিত’ প্রশংসিত হয়েও বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করেনি। তাই তিনি ভেবেছিলেন, গ্রামের গল্প, জীবন সংগ্রামের গল্প আর চলবে না। বাঙালী দর্শক চিরকালই ছবিতে নাচগান পছন্দ করেছে- সেই উপাদান বজায় রেখে কী ভালো ছবি করা যায় না? সত্যজিৎ রায় বেছে নিয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘জলসাঘর’। জলসাঘর লেখার বছর খানেক পরেই তিনি লিখেছিলেন ‘রায়বাড়ি’। রায়বাড়ি ও জলসাঘর দুটি গল্পকেই একসাথে করে চিত্রনাট্য নির্মাণ করেছিলেন সত্যজিৎ। তারাশঙ্কর চিত্রনাট্য লিখতে রাজী ছিলেন। সত্যজিতের অনুরোধে চিত্রনাট্যও লিখে দিয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায় দেখলেন চিত্রনাট্য মূল গল্প থেকে অনেকটাই পালটে গিয়েছে। সে কথা জানাতেই লেখক সত্যজিৎকে নিজেই চিত্রনাট্য লিখে নিতে বললেন। সত্যজিৎ চিত্রনাট্য লিখে লেখকের কাছে জমা দিলেন ভুল ত্রুটি শুধরে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সত্যজিতের চিত্রনাট্য পড়ে তারাশঙ্কর খুব খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, এত টানটান, মেদহীন চিত্রনাট্য তো লিখেছেন, এতে হাত দেওয়া যায় না। সত্যজিতের ছবি দেখেও মুগ্ধ হয়েছিলেন লেখক।
বিশ্বম্ভর রায়ের সংগীতের প্রতি অনুরাগকেই তিনি ছবির মূল ভাব হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসের মেজাজ, সাবেক পোশাক, সাজসজ্জা, ধ্রুপদী সংগীত ও নৃত্য এবং ট্র্যাজিডির আমেজ মিশিয়ে একটা বাণিজ্যসফল ছবি নির্মাণের অভিপ্রায়ে তিনি চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। সেটা তৎকালে সফলও হয়েছিলো। ‘জলসাঘর’ ছাড়াও তারাশঙ্করের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন ‘অভিযান’ নামের আরেকটি সিনেমা। অভিনয় করেন সৌমিত্র ও ওয়াহিদা রহমান।
এছাড়াও তারাশঙ্করের গল্প, উপন্যাস অবলম্বনে একে একে নির্মিত হয়েছে ব্যবসাসফল বাংলা সিনেমা। তারমধ্যে সপ্তপদী, আরোগ্য নিকেতন, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, গণদেবতা, বিপাশা, ফরিয়াদ, কবি, বিচারক, হার মানা হার এবং অন্তরমহল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জীবিত অবস্থায় বেশীর ভাগ সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন তারাশঙ্কর নিজেই।