সাম্প্রতিককালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে মধ্যে ‘গেরিলা’কে সবচেয়ে সুনির্মিত চলচ্চিত্র বলে মনে করেন বোদ্ধারা। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ছবিটি মুক্তির এক যুগ পূর্ণ করলো শুক্রবার (১৪ এপ্রিল)। ২০১১ সালের এই দিনে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিলো ছবিটি।
‘গেরিলা’র এক যুগ পূর্তিতে উচ্ছ্বসিত এই ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান ‘গেরিলা’ নিয়ে বিশেষ উচ্ছ্বসিত।
অকপটে বলছেন, ‘গেরিলা’র কারণেই তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিলো। ছবিটির এক যুগ পূর্তিতে জয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লিখেন,“নিরন্তর ভালোবাসা নাসিরউদ্দিন ইউসুফকে, আমার অভিনয়–জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় গেরিলা। টেলিভিশন ছেড়ে আমাকে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করার সাহস দেয় গেরিলা।”
তিনি বলেন, কিছু ছবি থাকে, অভিনয় জীবন জুড়ে যার বিস্তর প্রভাব, যা ভালোলাগার, মাঝে মাঝেই স্মৃতিতে উজ্জ্বল।। কিন্তু কিছু ছবি অচিরেই জীবন হয়ে যায়। কিছু চরিত্রের হয়ে একটা অন্য জীবন বেছে নেওয়া যায়। এক যুগ আগে, এই দিনে মুক্তি পাওয়া, মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত গেরিলা ছবিটি তেমনি একটি ছবি। আর বিলকিস আমার কাছে তেমন একটি রক্ত মাংসের চরিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আজ আমার দেশে স্বাধীনতার আলো হয়ে প্রতি বাঙালীর মনে জ্বলছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের এমন বাঙ্ময় পরিবেশনা, সত্যি আজও শিহরিত হই।
গেরিলার শুটিং সময়ের স্মৃতির কথা তুলে ধরে জয়া বলেন,‘এই চলচ্চিত্রের অংশ হতে পারা আজ ১২ বছর পরেও আমার জন্য বড় আপন এক অনুভূতি। ১২ বছরে সময় অনেক বদলেছে, ১২ বছরে প্রযুক্তির ঘোড়া দৌড়ে এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ, কিন্তু অনুভূতির বিন্দু বিন্দু জুড়ে ‘গেরিলা’ ছবির স্মৃতিগুলো আজও জীবন সমার্থক, এই অনুভুতির কোনো পরিবর্তন নেই।’
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই ছবির সঙ্গে জড়িয়ে আছে জয়ার নিজস্ব অনুভূতি। রাখঢাক না রেখে জয়া বলেন, আমার অভিনয় করা বিলকিস বানু চরিত্রে উঠে এসেছিল মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মেয়ের সাহসী অবদানের গল্প। উপন্যাসে এ চরিত্র তৈরি করেছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আর পর্দায় -পরিচালক নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। ‘গেরিলা’ ছিল এই দুই মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর উপলক্ষ্য। একই সঙ্গে ছিল আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছে সামান্য ঋণ স্বীকারের সুযোগ। কে যে আজ এই লেখা লিখছে, জয়া না বিলকিস জানি না, তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই দুই সত্ত্বার মাঝে দেশ নামক ভাবনা খানি মিলেমিশে এক মুগ্ধবোধ হয়ে আছে।
সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিজ্ঞতা নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্মাণ করেন ‘গেরিলা’। আলোচিত এ চলচ্চিত্রে জয়া ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শতাব্দী ওয়াদুদ, এটিএম শামসুজ্জামান, শম্পা রেজা, আহমেদ রুবেল, আজাদ আবুল কালাম পাভেল, মিনারা জামান, মাসুম আজিজ, এস. এম. মহসিন, কচি খন্দকার, জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায়, কামাল বায়েজিদ, গোলাম মাওলা শ্যামল, ওমর আইয়াজ অনি, চন্দন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান, এরফান মৃদা শিবলু, মোস্তফা মনোয়ার আল-আমিন, ফেরদৌস, পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, মিলু হক, লে. কর্ণেল, (অবঃ) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, বীরপ্রতীক প্রমুখ।
দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গেরিলা সুনাম অর্জন করে। মুক্তির পর ২০১১ সালে ১০টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়াও ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’, ১৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নেয় ‘নেটপ্যাক পুরস্কার’।