ভিয়েতনামে বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস-২০২৩ এবং বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্কের সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল (৯ জুন) ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাাদায় ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে হ্যানয়স্থ পাঁচতারকা ডাইউ হোটেলে উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা, আলোচনা অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, ডকুমেন্টরি প্রদর্শন ও নৈশ্যভোজের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিয়েতনামের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডু হাং ভিয়েত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিয়েতনামের জাতীয় এসেম্বলীর সদস্য ম্যাডাম লে থু হা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিসহ প্রায় ২৫০ জন অতিথি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এর পরেই বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিবৃন্দকে স্বাগত ও উষ্ণ অর্ভ্যথনা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বক্তৃতা শুরু করেন।
বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নের্তৃত্বের কথা তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে আরও স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে অত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। তিনি আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিদেশি বন্ধুসহ যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন।
সামিনা নাজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অগ্রগতি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং গত ১৪ বছরে টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ বার্ষিক ৬% হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এ সাফল্যের পিছনের চালিকা শক্তি।
জাতীয় দিবস উৎযাপনকালে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ দু’দেশের মধ্যকার শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ভিয়েতনামের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ২০২৩ সাল বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। ১৯৭৩ সালে ঢাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামের প্রতিনিধিদল ও কূটনৈতিকদের উপস্থিতিকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন যার পরে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এটি উত্তর ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিল এবং উত্তর ভিয়েতনামে বোমা হামালার তীব্র বিরোধিতা করেছিল যা বাংলাদেশে বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রদূত এসময় গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভিয়েতনামের মহান নেতা হো-চি-মিন-কে যারা দেশের মানুষকে মুক্ত করার ইচ্ছা থেকে সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, শুধু অর্থনৈতিক কূটনীতিতে নয়, কোভিড মহামারিতেও বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম উভয় সরকার একে অপরের পাশে দাাঁড়িয়েছে। তিনি কোভিড মহামারির সময় বাংলাদেশে চিকিৎসা সামগ্রী অনুদানের জন্য ভিয়েতনামে সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
তিনি আগামী ৫০ বছরে এবং তার পরেও দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগীতার বন্ধন আরও জোরদার করার আহবান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু আজকের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ভিয়েতনাম সরকারের বিশেষ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন তিনি।