ক্রিকেট ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম টেস্ট ম্যাচ জিতেও সংবাদ সম্মেলনে আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন রোহিত শর্মা। দেড় দিনেরও কম সময়ে ৬৪২ বলের (১০৭ ওভার) মধ্যেই ম্যাচটি শেষ হয়ে যায়। কেপটাউনে পেসারদের সামনে ব্যাটারদের জন্য মাইনফিল্ড হয়ে ওঠা পিচের মান নিয়ে উঠেছে বড়সড় প্রশ্ন। ভারতীয় অধিনায়ক সরাসরি পিচের সমালোচনায় না গেলেও এটি নিয়ে ম্যাচ রেফারিদের মুল্যায়নের নিরপেক্ষ না থাকার সমালোচনা করেন।
প্রোটিয়াদের ৭ উইকেটে হারিয়ে দুই টেস্টের সিরিজ সমতায় শেষ করেছে ভারত। ম্যাচের ফল নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও ভারতের স্পিননির্ভর পিচগুলো বিশেষভাবে টার্নিং উইকেট হওয়ার যে সমালোচনার ওঠে, এটির নিন্দা জানান রোহিত।
‘যখন আপনি এখানে (সাউথ আফ্রিকা) খেলতে আসেন, তখন টেস্ট ক্রিকেটকে চূড়ান্তভাবে পুরস্কৃত করেন এবং মর্যাদা সম্পর্কে কথা বলেন। তারপরে আপনার এই যুক্তির স্বপক্ষে দাঁড়ানো উচিৎ।’
‘যখন আপনাকে এইরকম চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করানো হয়, তখন আপনার এসে সেটির মুখোমুখি হওয়া উচিৎ। ভারতে প্রথম দিন পিচে টার্ন নিতে শুরু করে, তারা ধুলো উড়ছে ধুলোর উড়ছে রব ওঠায়। এও বলে এখানকার পিচে এতো ফাটল।’
কেপটাউনে প্রথম দিনেই দু’দলের ২৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল পেসাররা। আর দ্বিতীয় দিনে চা বিরতির আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে ম্যাচের ফলাফল। ৫৫ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস। নিজেদের প্রথম ইনিংসে নেমে কোনো রান যোগ না করে শেষ ছয় ব্যাটারকে হারিয়ে ১৫৩ রানে থেমে যায় রোহিত শর্মার দল।
সাবেক ইংলিশ ওপেনার ক্রিস ব্রড সাউথ আফ্রিকা-ভারত দুই টেস্টের সিরিজের ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে ছিলেন। রোহিত বিশ্বাস করেন, বিশ্বব্যাপী আইসিসির তালিকাভুক্ত রেফারিদের নিরপেক্ষ হওয়া উচিৎ।
সাংবাদিকদের সামনে আক্রমণাত্মক মেজাজে টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাই সেখানেই নিরপেক্ষ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ম্যাচ রেফারিদের। এই ম্যাচ রেফারিদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যারা পিচকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন সেদিকে তাদের নজর রাখতে হবে।’
আহমেদাবাদে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্যবহৃত পিচকে আইসিসি ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট গড়পড়তা বলে মূল্যায়ন করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিষয়টি নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেন রোহিত।
‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে বিশ্বকাপের ফাইনালের পিচকে গড়পড়তার নিচে (মূলত গড়পড়তা) ছিল বলে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সেখানে একজন ব্যাটার সেঞ্চুরি পেয়েছে। এটা কীভাবে খারাপ পিচ হতে পারে? সুতরাং, আইসিসি এবং ম্যাচ রেফারিদের এটির দিকে নজর দেয়া দরকার।’
‘তারা যা দেখেন তার ভিত্তিতে পিচগুলিকে রেটিং দেয়া শুরু করুক এবং স্বাগতিক দেশগুলোর উপর ভিত্তি করে নয়। আশা করি এই ধরনের (কেপটাউন) পিচের জন্য তারা তাদের চোখ-কান খোলা রাখবেন এবং সেই দিকগুলো দেখবেন। আমরা এই ধরনের পিচে খেলতে পেরে নিজেদের নিয়ে গর্বিত। আমি নিরপেক্ষ থাকার কথা বলতে চাই।’
ম্যাচ অফিসিয়ালদের মনোভাব নিয়ে নিজের অবিশ্বাসের কথা খোলামেলাভাবে বলেই রোহিত থামেননি। পিচের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে তারা যে মানদণ্ডগুলো ব্যবহার করেন, এ সম্পর্কে সরাসরি ব্যঙ্গাত্মকভাবে জানতেও চান। বললেন, ‘আমি দেখতে চাই কীভাবে পিচ মূল্যায়ন করা হয়েছে। আমি এখন দেখতে চাই। আমি তালিকা দেখতে চাই, তারা কীভাবে পিচকে মূল্যায়ন করে থাকে।’
পিচ মূল্যায়নে বৈষম্যের অভিযোগ এনে ভারতের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘একটা বল যখন দ্রুতগতিতে যায়, তখন ঠিক আছে। কিন্তু যদি বলটি টার্ন করা শুরু করে তারা এটি পছন্দ করেন না। আপনি যদি বলটি শুধুমাত্র সিম করাতে চান এবং টার্ন না করতে চান, তবে এটা ভুল।’
‘আমি এখন যথেষ্ট ক্রিকেট দেখেছি। প্রচুর পরিমাণে দেখেছি যে এই ম্যাচ রেফারিরা কীভাবে এই মুল্যায়ন করেন, কীভাবে নোট করতে চায়। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তাদের নিরপেক্ষ হতে হবে।’