চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শামীমাকে আইএস যোদ্ধা হিসেবে সিরিয়ায় পাঠায় কানাডার এজেন্ট

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার জন্য বৃটেন ছেড়ে আসা শামীমা বেগমকে কানাডার এক এজেন্ট সিরিয়ায় পাঠিয়েছিল।

বিবিসি বলছে, কানাডার ঐ এজেন্ট শামীমা বেগমের পাসপোর্টের বিবরণ শেয়ার করেছেন এবং আইএস-এর হয়ে লড়াই করার জন্য অন্যান্য ব্রিটিশদের সিরিয়া পাচার করেছেন।

কানাডার ওই এজেন্টের নাম রাশিদ। তিনি সম্প্রতি তুরস্ক পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেখানেই কর্মকর্তাদের কাছে শামীমা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। বিবিসির কাছে শামীমা এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সিরিয়া আসতে রাশিদ তাদেরকে সহায়তা করেছিল। রাশিদের সাহায্য না পেলে তার বান্ধবীদের নিয়ে তিনি সিরিয়া আসতে পারতেন না। তবে অপর দুই বান্ধবীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি শামীমা।

২০১৫ সালে শামীমা সিরিয়ায় পৌঁছে বিয়ে করেছিলেন এক বিদেশী আইএস যোদ্ধাকে। সিরিয়ায় প্রবেশ করে তারা সরাসরি রাক্কায় চলে যান। আইএসে অবিবাহিত মেয়েদের যোগ দেওয়ার সুযোগ নাই। তাই নিয়ম অনুযায়ী রাক্কায় একটি ভবনে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তরুণীদের একসঙ্গে রাখা হয় বিয়ে দেওয়ার জন্য।

শামীমা বেগম এবং আরও দু’জন স্কুল ছাত্রী আমীরা অ্যাবেজ ও খাদিজা সুলতানা ২০১৫ সালে ইসলামিক স্টেট-এ যোগদানের জন্য লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন।এই তিন ব্রিটিশ স্কুলছাত্রী ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমি থেকে পালিয়েছিলো আইএস এ যোগদান করার জন্য।

বর্তমানে উত্তর সিরিয়ার ক্যাম্প রোজ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন শামীমা। তিনি আপিলে যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলে শরণার্থী শিবিরের মানবেতর পরিবেশেই তাঁকে আটকে থাকতে হবে। আর এ পদক্ষেপ ইউরোপীয় কনভেনশনের আওতায় তাঁর মানবাধিকারেরও পরিপন্থী হবে। কিন্তু আদালত তাঁর এ যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, শামীমা যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তা তাঁর নিজের দোষে। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে এ দুর্দশায় ঠেলে দেওয়া হয়নি বা তাঁর মানবাধিকারও লঙ্ঘন করা হয়নি।

সিরিয়ার একটি বন্দী শিবির থেকে সম্প্রতি শামীমা বলেন, তিনি কোনোভাবেই এই মৃত্যুদণ্ড মেনে নিতে পারবেন না। বর্তমানে ২২ বছর বয়স শামীমার। তিনি জানান, তিনি এখন তার ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং নিজেকে শুধরে নিয়েছেন।

শামীমা তিন সন্তানের মা হয়েছিলেন। কিন্তু জন্মের পর পরই অপুষ্টিতে তিনটি বাচ্চাই মারা গেছে। তারপর আল রোজ বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। ধারণা করা হয়, তার স্বামী সিরিয়ায় কুর্দিদের পরিচালিত কোনো এক জেলে বন্দি আছে। তার সঙ্গে ২০১৯ সালের পর আর দেখা হয়নি শামীমার।

শামীমা যুক্তরাজ্যে ফেরার ইচ্ছে পোষণ করেন। কিন্তু, তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন। ফলে যুক্তরাজ্যে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে যায় শামীমার।

তারপর থেকেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব টিকিয়ে রাখতে আইনি লড়াই শুরু করেন শামীমা। ২০১৯ সালে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ও স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে আবেদন করেন তিনি। সেই আপিলের শুনানি শেষে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে রায় শোনান আদালত।

রায়ে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে রায় দেন আদালত। আদালত বলেন, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে শামীমা বেগম রাষ্ট্রহীন হয়ে যাননি। মা-বাবা বাংলাদেশি বলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারেন।

ফলে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার প্রাথমিক লড়াইয়ে হেরে যান শামীমা বেগম। যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট মামলার বিচারকাজ হয়, এমন আংশিক গোপন আদালত—দ্য স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের বৈধতা নিয়ে করা চ্যালেঞ্জের বিষয়টির শুনানি হয়।

আদালত সে সময় রায়েও একই ধরনের কথা বলেন,আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তিকে রাষ্ট্রহীন করার সুযোগ নেই। তবে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে শামীমা রাষ্ট্রহীন হয়ে যাননি। তিনি ‘বংশগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক’।

আদালত আরও বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের আগে শামীমা বেগম স্বেচ্ছায় যুক্তরাজ্য ছেড়ে গেছেন। তাই নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে তিনি যুক্তরাজ্যের বাইরে অবস্থান করছেন’ বিষয়টি এমন নয়।