চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

দুবাইতে আরাভ খানের আটকের খবরে যা জানালো পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি ও বহুল আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফেরানো সংবেদনশীল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকায় তাকে ফেরানো নির্ভর করছে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। পুলিশ বলছে সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা কাজ করছে। সে যাতে অন্য কোথাও যেতে না পারে সে বিষয়টিও ইন্টারপোলকে অবহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, দুবাইয়ের পুলিশ আরাভ খানকে আটক করেছে বলে আমাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। বর্তমানে আরাভ খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুবাই পুলিশ। এনসিবি দুবাইয়ের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ইমেইল পাওয়ার আগে আমরা বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারছি না বলেও জানান তিনি।

Bkash July

তবে আলোচিত আরাভ খানের বিষয়ে দুবাইয়ের পুলিশ এবং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য দেয়নি। মঙ্গলবার সকালের দিকে আরাভ খান দুবাই ছেড়ে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েক ঘণ্টা পর তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।

আরাভ খান গ্রেপ্তার হননি
মঙ্গলবার ২১ মার্চ সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হননি। তবে তিনি পালিয়ে থাকতে পারবেন না।

Reneta June

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকুই বলতে পারি যে, বাংলাদেশের আসামি কোনো বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে পালিয়ে থাকতে পারবে না।

আরাভকে দেশে ফেরানো সংবেদনশীল
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি খুরশীদ আলম খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আরাভ খানের বিষয়টি সংবেদনশীল। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার রেড নোটিশও জারি হয়েছে। তাকে দেশে ফেরাতে হলে বহিঃসমর্পণ চুক্তি লাগবে যা কিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের নেই। এছাড়া আরেকটা বিষয় হলো আরাভ ভারতের নাগরিক। সেটা ভুয়া কিনা পরের বিষয়, কিন্তু দৃশত তিনি ভারতীয় পাসপোর্টধারী।’

রেড নোটিশ জারি হলে দেশে ফেরানো যায়?
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ইন্টারপোল কারও বিরুদ্ধে একবার রেড নোটিশ জারি করলে সেটি সংস্থাটির সদস্যভুক্ত ১৯৪টি দেশের কাছে পাঠানো হয়। একবার কারও বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি হলে ইন্টারপোল তার সব সদস্য দেশকে ওই রেড নোটিশ-প্রাপ্ত ব্যক্তির দিকে নজর রাখতে বলে। এবং ফিরিয়ে দেওয়া না পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করতে বলে। এরআগে সোমবার ২০ মার্চ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন: ‘পুলিশ হত্যা মামলায় যে নামে চার্জশিট হয়েছে, সেই নামে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইন্টারপোল এটি গ্রহণ করেছে। এখন বাকি কাজ তারা করবে।’

দুই দেশের আন্তরিক হতে হবে
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘যেহেতু আরাভ ভারতের নাগরিক তাই এখন এটা সম্পূর্ণ ভারতের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসও এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। দুদেশের আন্তরিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। দুবাইকে আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে ভারতের কাছে আরাভকে ফেরানোর জন্য। এরপর আমরা ভারতের সাথে বহিঃসমর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আরাভকে দেশে ফেরাতে পারব।’

অর্থের উৎস খুঁজছে সিআইডি
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ বলছে, আরাভের অর্থের গতিপ্রবাহ খুঁজে বের করার জন্য তারা কয়েকটি সম্ভাব্য সূত্র ধরে কাজ করছেন। আরাভের এই দেশে অর্থসম্পদ ও মালিকানাধীন স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে কি না, প্রথমে তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পরে তার অন্যান্য দেশের পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিস্তারিত সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হবে। এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অব মানি লন্ডারিং সংস্থারও সহায়তা নেয়া হবে।

আরাভ নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে: আইনজীবী
আরাভ খান নির্দোষ বলে দাবি করেছেন আইনজীবী রুহুল আমিন।হত্যা মামলায় পলাতক আসামির পক্ষে স্ট্রেট ডিফেন্স আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার বিধান আছে। সে অনুযায়ী আইনজীবী রুহুল আমিনকে এ মামলায় নিয়োগ দিয়েছেন আদালত।মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রুহুল আইনজীবী আমিন দাবি করেন, আসামি রবিউল ওরফে আরাভ নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবী ফারুক হোসেন বাদীকে আরাভের পক্ষে জেরা করেছেন।

২০২২ সালের ২৮ জুলাই এ মামলায় বাদী নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর আংশিক জেরা হয়। এরপর মঙ্গলবার আইনজীবীরা অবশিষ্ট জেরা করেন।মামলার নথি থেকে দেখা যায়, মামলাটিতে মোট ৩৮ জন সাক্ষী রয়েছে।

মামলার অপর আসামিরা হলেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), ইমরানের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) এবং দুই কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণ ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফী (১৬) ও ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা (১৬)। আসামিদের মধ্যে রবিউল ও সুরাইয়া পলাতক, অপ্রাপ্ত বয়স হওয়ায় আন্নাফী ও মাইশা জামিনে আছেন। অপর আসামিরা কারাগারে রয়েছেন। আন্নাফী ও মাইশার বিচার শিশু আদালতে হচ্ছে।

আরাভ কেন আলোচিত?
২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় খুন হন এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন তার মরদেহ বস্তায় ভরে গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মামলাটি তদন্ত করে পরের বছরের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল করে ডিবি। অভিযোগপত্রে পুলিশ উল্লেখ করে, রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চক্র ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত।

২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও আরও নয়জনকে আসামি করা হয়।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর হত্যা মামলাটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর রবিউল ইসলাম পরিচয় দিয়ে একজন ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। প্রায় ৯ মাস কারাভোগের পর ওই যুবক দাবি করেন, তিনি আসল রবিউল ইসলাম নন, তার প্রকৃত নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কাছ থেকে মাসিক নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে আসামির পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এর মধ্যে রবিউলের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও চলচ্চিত্রের বেশ কয়েকজন তারকাকে আমন্ত্রণ জানানোর পর থেকে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View