ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিকের কীর্তি ছিল না কারও। কিংবদন্তি পেলে-রোনাল্ডো-রোনালদিনহোদের এত অর্জনের মধ্যে নেই এমন নজির। যা এবার করে দেখিয়েছেন দেশটির নারী দলের ফরোয়ার্ড আরি বোর্হেস। তার হ্যাটট্রিকে পানামা নারী দলকে উড়িয়ে মেয়েদের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে দারুণ জয় তুলেছে সেলেসাও বাহিনী।
অ্যাডিলেডের হিন্ডমার্শ স্টেডিয়ামে সোমবার এফ গ্রুপের ম্যাচে প্রথমবার বিশ্বআসরে খেলার সুযোগ পাওয়া পানামাকে ৪-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে ব্রাজিল। ফিফার তথ্য মতে, ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবার অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েছেন ২৪ বর্ষী বোর্হেস।
ইতিহাস গড়া বোর্হেস জানিয়েছেন, ফুটবলের প্রতি অনুপ্রেরণার খোরাক জুগিয়েছেন তার সতীর্থ মার্তা। ৩৭ বর্ষী মার্তাও এবার তার সঙ্গেই খেলছেন। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলছেন মার্তা।
বোর্হেসকে নিয়ে ব্রাজিল জার্সিতে ১১৫ গোল করা মার্তা বলেছেন, ‘অভিষেকে তিন গোল করা সহজ ব্যাপার নয়, কিন্তু সে ভিন্ন চিন্তায় খেলেছে। একটি হ্যাটট্রিকের সঙ্গে অন্য গোলটি করতেও সহায়তা করেছে, যা প্রায় চারটি গোলই বলা চলে।’
বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এসে মাঠ কাঁপালেও এপর্যন্ত আসাটা সহজ ছিল না বোর্হেসের। মাত্র ১০ বছর বয়সে দেখতে হয়েছে পরিবারের টানাপোড়ন। বাবা-মাকে ছেড়ে থাকতে হয়েছে নানীর সঙ্গে। উন্নত জীবনের জন্য বাবা-মা পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্রাজিলের আরেক শহর সাও পাওলোতে। লম্বা সময় পর শহরে তার পরিবারের কাছে ফিরে যোগ দেন সেন্ট্রো অলিম্পিকো ক্লাবে। সেখান থেকে শুরু হয় নিজেকে প্রমাণ করার নতুন চ্যালেঞ্জ।
সেখান থেকে খেলার সুযোগ পান স্পোর্ট রেসিফে এবং সাও পাওলো ফুটবল ক্লাবে। দুই ক্লাবের হয়ে তিন বছরে ৮৩ ম্যাচে ৩৪ গোল করেন বোর্হেস। এরপর পালমেইরাসে এসে ২০২২ সালে মেয়েদের কোপা লিবার্তোদোরেস ট্রফি জেতেন এ ফরোয়ার্ড। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে এবারই প্রথম আসতে পেরেছেন।
ম্যাচের শেষে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বোর্হেস বলেছেন, ‘আজ যা করেছি, সেটি ভাবতে গিয়ে যদি পেছনে ফিরে তাকাই, তাহলে এর প্রতিটি ধাপই আমার জন্য অনেকবেশি আবেগপূর্ণ। যেখানে হাসি, কান্না, এবং আমি কোন পরিবার থেকে কোথায় এসেছি তা মনে করিয়ে দেয়। আজকের এই দিনটি আমার স্বপ্নের মতো লাগছে।’