‘খেলার জগৎ গড়ি’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলাপমেন্ট (ব্র্যাক আইইডি) আয়োজন করে, যেখানে বিভিন্ন বয়সী শিশুদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবক ও পরিচর্যাকারীরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
খেলার মধ্য দিয়ে “ব্র্যাক প্লে-ল্যাব” শিক্ষাক্রম ঘিরে শিশুদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই আনন্দঘন উৎসব। ব্র্যাকের ৫০তম এবং প্রাকশৈশব উন্নয়নে এর অন্যতম প্রধান অংশীদার ডেনমার্কভিত্তিক লেগো ফাউন্ডেশনের ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উৎসবটির আয়োজন করে প্লে-ল্যাব মডেলটির উদ্ভাবক ব্র্যাক আইইডি।
ঢাকার মহাখালিতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টারের প্রাঙ্গনের এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
ব্র্যাক প্লে-ল্যাব কেন্দ্রগুলো মূলত ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের খেলতে খেলাতে শেখার কমিউনিটিভিত্তিক, উচ্চমানসম্পন্ন ও ব্যয়সাশ্রয়ী “ব্র্যাক প্লে-ল্যাব” মডেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। খেলাভিত্তিক শিখনসূচি অনুসরণ করার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সামাজিক-মানসিক বিকাশ, স্বশৃঙ্খলা, ভাষা, খেলা ও সৃজনশীলতা এবং সমমর্মিতার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখা এই মডেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। স্থানীয় সংস্কৃতিতে প্রচলিত শিশুর উপযোগী খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা মানসিক ও সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ পায়। এসব কেন্দ্রে শিশুর শিখনে সহায়তা করেন প্রশিক্ষিত “খেলার সাথী” (প্লে-লিডার)।
অনুষ্ঠানে মাটি দিয়ে পুতুল তৈরি, ছবি আঁকা, গল্প শোনা, ছবিতে শেখা, মাপেট খেলা (কাপড়ের পুতুলের সঙ্গে কথা বলা), শব্দ ও সংখ্যা তৈরি প্রভৃতি নানা ধরনের খেলায় অংশ নেয় শিশুরা। মোরগ লড়াই, লুকোচুরিসহ আবহমান বাঙালি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির বিভিন্ন খেলার একটি গবেষণামূলক প্রদর্শনীও এতে আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোর-তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় তরুণ কার্টুনিস্ট-শিল্পী মোরশেদ মিশু, সাইয়েদ রাশাদ ইমাম তন্ময় ও মাসুদা এবং যাদুকর আসিফ আসগর শিশুদের সঙ্গে নানা ধরনের খেলাধুলায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক আইইডি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইরাম মারিয়াম এবং লেগো ফাউন্ডেশন সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ক্রিস্টিন মর্শ।
বাংলাদেশে ব্র্যাকের নিজস্ব প্লে-ল্যাব কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও যৌথভাবে এ কার্যক্রমের প্রসার ঘটাতে কাজ করছে ব্র্যাক। এ পর্যন্ত ৯টি জেলার ৩২ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০০টি প্লে-ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ২৫ হাজারের বেশি প্রাক-প্রাথমিক শিশু খেলার মাধ্যমে শেখার সুযোগ লাভ করেছে। এসব প্লে-ল্যাব স্থাপনে সম্পূর্ণ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে ব্র্যাক আইইডি এবং পরিচালনা করছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে উদ্ভাবিত এই মডেলটির আন্তর্জাতিক প্রসারেও কাজ করছে ব্র্যাক আইইডি।। ব্র্যাকের আইইডির নিজস্ব পরিচালনায় বাংলাদেশ, উগান্ডা ও তানজানিয়ায় ৬৫৬টি প্লে-ল্যাবে ১১,৫০০ শিশু অংশগ্রহণ করছে।
সংঘাত পরিস্থিতিতে থাকা শিশুদের জন্য “ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্লে-ল্যাব” মডেলও উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই মডেল অনুসরণে শরণার্থী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি-ভাষা ও তাদের আচার-আচরণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে “হিউম্যানিটারিয়ান প্লে-ল্যাব” স্থাপন করা হয়। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সহিংস পরিস্থিতির শিকার শিশুদের জন্য স্থাপিত প্লে-ল্যাবের সুরক্ষিত পরিবেশে রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে নিরাপদ বোধ করে এবং ট্রমা কাটিয়ে উঠে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটাতে পারে সে বিষয়ে “প্লে-লিডাররা” বিশেষ যত্নবান থাকেন। উগান্ডাতেও প্রতিবেশী দেশ থেকে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী পরিবারের শিশুদের জন্য এ ধরনের প্লে-ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
বৈশ্বিক জরিপে দেখা গেছে, ৮৪% শিশু চায় তাদের বাবা-মা যেন তাদের সঙ্গে আরো বেশি সময় ধরে খেলা করে। শিখন বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপরিহার্য দক্ষতা বিকাশের জন্য খেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্র্যাক উদ্ভাবিত প্লে-ল্যাব মডেলটির সাহায্যে নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি এবং আর্থসামাজিক-ভৌগোলিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্থানীয়ভাবে পাওয়া উপকরণ দিয়ে প্লে-ল্যাব কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়ে থাকে। কেন্দ্র পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনায় অভিভাবক এবং স্থানীয় কমিউনিটি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকেন।
লেগো ফাউন্ডেশন এবছর ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুদের শিখনে খেলার গুরুত্বকে আরো জোরদার করার লক্ষ্যে “বিল্ড এ ওয়ার্ল্ড অব প্লে” “খেলার জগৎ গড়ি” শীর্ষক ক্যাম্পেন শুরু করে। এর সহযোগী সংস্থা হিসেবে ব্র্যাক বাংলাদেশ, উগান্ডা ও তানজানিয়ায় স্থানীয় পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পেনটি পরিচালনা করছে।