বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক সুনামগঞ্জ জেলায় আনন্দময় শিশুশিক্ষার এক অভিনব নৌযাত্রার শুভসূচনা করেছে। ইতিবাচক মূল্যবোধ, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তিনটি নৌকাস্কুল উদ্বোধন করেছে তারা।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই নৌযাত্রাশিশুদের খেলা ও মজাদার ও আনন্দঘন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখার সুযোগ দেবে। ব্র্যাক তাদের প্রতিষ্ঠানের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ উদ্যোগ নিয়েছে। জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বিপুল আনন্দ-উদ্দীপনা ও উৎসবময় পরিবেশে এই নৌযাত্রা উদ্বোধন করা হয়।
নানা বর্ণিল ও মজাদার উপকরণে সাজানো নৌকা তিনটি সুনামগঞ্জ থেকে যাত্রা করে পরবর্তী এক বছর নদীপথে মেঘনার মোহনায় অবস্থিত দক্ষিণের দ্বীপ জেলা ভোলা পর্যন্ত ভ্রমণ করবে। পথিমধ্যে নৌকাগুলো তীরবর্তী বিভিন্ন জনপদে যাত্রাবিরতি করবে। এসময় সেখানকার অধিবাসী শিশু-কিশোর, যুবা, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ নৌকাগুলোতে উঠে তিনটি বিষয়ের ওপর জ্ঞানলাভ করতে পারবেন।
নৌকায় অবস্থানকারী শিক্ষক এবং স্থানীয়দের মধ্য থেকে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকবৃন্দ স্থানীয় শিশু-কিশোর-যুবাদের সাহায্য করবেন। একেকটি যাত্রাবিরতিতে ৭-১০ দিনের জন্য সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্থানীয়দের জন্য উন্মুক্ত থাকবে নৌকাগুলো। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের সুবিধার্থে নৌকায় ওঠানামার জন্য বিশেষ র্যাম্প থাকবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সুনামগঞ্জের বিশম্ভরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান মোঃ সফর উদ্দিন বলেন, “২০১১ সালের ব্র্যাক বোট স্কুলের উদ্যোগে হাওর এলাকার বঞ্চিত শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পায়। শিক্ষাকে শিশুদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে এবং তাই হাওর অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ব্র্যাকের আরও বেশি বোট স্কুল চালু করা উচিত।”
ব্র্যাকের পরিচালক সাফি রহমান খান বলেন, “গণিতের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য এবং জাদু কখনও কখনও দেখা কঠিন হতে পারে, এবং এমনকি ছাত্রদের বোঝানো কঠিন। অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা, খেলার উপর ভিত্তি করে এবং ক্রিয়াকলাপগুলির মাধ্যমে, শিশুরা গণিতকে ভয় না পেয়ে আশা করি উপভোগ করবে।”
নৌকা তিনটির শিক্ষা উপকরণগুলো মূলত প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের শিশুদের লক্ষ্য করে বাছাই করা হয়েছে। তবে আরো উঁচু শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং সাধারণভাবে সকল দর্শণার্থী মজার উপকরণ থেকে আনন্দের মাধ্যমে শিখতে পারবেন। মূল্যবোধ, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে হাতেকলমে কাজ, মজার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নানা ধরনের পাজ্ল্ সমাধানমূলক খেলা, গণিতের সমস্যা ইত্যাদি দিয়ে শিক্ষামূলক কার্যক্রম সাজানো হয়েছে। আছে প্রখ্যাত গণিতবিদ ও বৈজ্ঞানিকদের সচিত্র জীবনী প্রদর্শনের ব্যবস্থা।
ব্র্যাকের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের দর্শনের অনুপ্রেরণায় ইতিবাচক মূল্যবোধ থিমের ওপর নৌকাটিকে সাজানো হয়েছে। স্যার ফজলের দর্শন ছিল, নিয়মিত পাঠক্রমের পাশাপাশি শিশুকে মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এবং পারফর্মিং আর্টের শিক্ষা দিতে হবে। ব্র্যাকের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা যাতে এসব বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করেছিলেন তিনি।
নিরাপত্তার জন্য নৌকাগুলো সার্বক্ষণিক সিসিটিভি পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে এবং এতে ব্র্যাকের সুরক্ষাবিষয়ক নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালন করা হবে।
ব্র্যাক ২০১১ সালে প্রথম হাওরের দুর্গম এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য নৌকার স্কুল চালু করে। শিশুদের বিদ্যালয় গমন নয়, বরং বিদ্যালয় গমন করবে শিশুদের কাছে এই ভাবনা থেকে উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়। ব্র্যাকের নৌকার স্কুল প্রকল্পটি ফিনল্যান্ডভিত্তিক শিক্ষা উন্নয়নবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘হান্ড্রেড’ কর্তৃক ২০১৭ সালে বিশ্বের ১০০টি অনুপ্রেরণাদায়ী উদ্ভাবনী উদ্যোগের অন্যতম ‘হান্ড্রেড গ্লোবাল ইন্সপাইরিং ইনোভেশনস অব ২০১৭’ হিসেবে মনোনীত হয়।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দুর্গম এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে।