সঞ্জীব চৌধুরী। সংগীত জগতের এক কিংবদন্তীর নাম। সাংবাদিকতা কিংবা বিনোদন জগতের বাইরেও ভক্তদের কাছে যিনি সবার প্রিয় সঞ্জীবদা। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬৪ সালে জন্ম নেয়া প্রয়াত সঞ্জীব বেঁচে থাকলে ৫৯ বছর পূর্ণ করে ৬০ তে পা রাখতেন তিনি।
তার জন্মদিনে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর রাজধানীতে হচ্ছে সঞ্জীব উৎসব। এবারও হচ্ছে না ব্যতিক্রম। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে বসছে ‘সঞ্জীব উৎসব’।
সেখানে গান পরিবেশন করবেন একদল সংগীততারকা। এদের মধ্যে আছেন লিমন, জয় শাহরিয়ার, মুয়ীজ মাহফুজ, সন্ধি, আহমেদ হাসান সানি, সাহস মুস্তাফিজ, সুহৃদ স্বাগত, শতাব্দী ভব, অর্ঘ্য, ঘুণপোকা, রাজেশ মজুমদার ও রাশেদ।
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্ম নিয়ে সঞ্জীবের ছোটবেলা কাটে সেখানেই। অষ্টম শ্রেণির পর ঢাকার বকশী বাজার নবকুমার ইন্সটিটিউটে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখান থেকেই ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন।
কবি, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, গায়ক এবং সংগঠক হিসেবে খ্যাতি ছিল মেধাবী সঞ্জীব চৌধুরীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন সঞ্জীব চৌধুরী। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। সর্বশেষ কাজ করেছিলেন যায়যায়দিনের ফিচার এডিটর হিসেবে। দেশের দৈনিক পত্রিকায় ফিচার বিভাগের যাত্রা শুরুর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অনন্য।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি ‘শঙ্খচিল’ দলে সংগীতচর্চা করতেন সঞ্জীব। ১৯৯৬ সালে সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘দলছুট’। সঞ্জীব চৌধুরী ও বাপ্পার যৌথ উদ্যোগে এই ব্যান্ডের অ্যালবামগুলো হলো- আহ্ (১৯৯৭), হৃদয়পুর (২০০০), আকাশচুরি (২০০২) এবং জোছনা বিহার (২০০৭)।
সঞ্জীব চৌধুরীর সুর ও গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘বায়োস্কোপ’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’, ‘আমি তোমাকেই বলে দিব’, ‘রিকশা’, ‘কথা বলব না’, ‘সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে আউলা বাতাস খেলে’, ‘চোখ’, ‘তখন ছিল ভীষণ অন্ধকার’, ‘আহ ইয়াসমিন’ প্রভৃতি। তাঁর গানে সমাজ, দেশ ও রাজনৈতিক সচেতনতার প্রতিফলন পাওয়া যেত তাঁর প্রতিটি গানে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর হঠাৎ করেই সবাইকে কাঁদিয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই মারা যান সঞ্জীব চৌধুরী।