চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভৈরবে ডা. নলিনী রঞ্জন দাস’র স্মরণসভা

ভৈরবে প্রয়াত ডা. নলিনী রঞ্জন দাস স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ৭ জুন’২৩ বিকালে শিশু-কিশোর সংগঠন কাকলি খেলাঘর আসর এই স্মরণসভার আয়োজন করে।

গত ৩ এপ্রিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, বামঘরানার রাজনীতিবিদ, “গরীবের ডাক্তার” খ্যাত নলিনী রঞ্জন দাস বার্ধক্যজনিত নানারোগে মৃত্যু বরণ করেন।

ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে খেলাঘর, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য , রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট শিশু সংগঠক শরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক পৌর মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড.ফখরুল আলম আক্কাছ, জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল-চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মো. সুলায়মান, অধ্যাপক মো. ফজলুল হক, ডা. ইন্দ্রজিৎ দাস, সাবেক অধ্যক্ষ আ.ক.ম মোবারক আলী, অধ্যক্ষ আহমেদ আলী।

বক্তারা এ সময় বলেন, প্রয়াত ডা. নলিনী রঞ্জন দাস বহুগুণের অধিকারী ছিলেন। “সাদা মনের মানুষ” বলতে যা বুঝায়, তিনি ছিলেন তেমন। তিনি ধর্ম-বর্ণ-গোত্রে নিজেকে আবদ্ধ করে না রেখে তিনি ছিলেন একজন “মানুষ”। সমস্ত মানবিক গুণে তিনি ছিলেন গুণান্বিত। যা বর্তমান কালের জন্য খুবই বিরল।

বক্তারা বলেন, তিনি তার ডাক্তারি পেশার শুরু থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিনে পয়সায় রোগী দেখেছেন। ওষুধের মূল্য কেউ দিলে নিয়েছেন, না দিলে কখনোই চেয়ে নেননি। ফলে বহুবার ফার্মেসী দিলেও, তার সেই ব্যবসা লাভজনক হয়নি। পুঁজি হারিয়ে তিনি বার বার দেউলিয়া হয়েছেন। কিন্তু এতে করে কখনও তার কোনো দুঃখবোধ হয়নি। এটিকে বরং তিনি মানব সেবার ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন।

ভৈরবের ঐতিহ্যবাহী শিমূলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাদের পরিবার। গ্রামের অনগ্রসর জনগোষ্ঠির লোকজনের সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রয়াসে বাবার দেওয়া স্কুলটি তিনি আমৃত্যু দেখ-ভাল করেছেন। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন বহু বছর। তার রোজগারের অধিকাংশ টাকা তিনি অকাতরে বিলিয়েছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ভৈরবে হানাদার ও রাজাকার প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রথম সভাটি হয় তার বাড়িতে। সেই কারণে পাকবাহিনী তার বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। রাজাকাররা হামলা চালায় সেখানে। কিন্তু তাকে এইসব হামলা পিছু হটাতে পারেনি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো ৯মাস তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন বিনে পয়সায়।

বক্তারা আরও বলেন, তিনি সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে কখনও কিছু পাওয়ার আশা করতেন না। তিনি কেবলি দেয়ার চেষ্টারত ছিলেন। রাগ, ক্রোধ, অহমিকা-তাকে কখনোই স্পর্শ করতো না। ধীর ও অল্পভাষী মানুষ ছিলেন তিনি। পেশার বাইরে অধিকাংশ সময় তিনি ব্যয় করতে পড়াশোনা করে। তাই তার জানার পরিধি ছিলো বহুমুখী। এমন একটি আয়োজন করায় বক্তারা আয়োজক কাকলি খেলাঘর আসরকে ধন্যবাদ জানান।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক-শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম রিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ মো. শরীফ হোসেন, লেখক অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ, টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান ফারুক, নিরাপদ সড়ক চাই’র সভাপতি, প্রেসক্লাব সম্পাদক এসএম বাকী বিল্লাহ, ডা: সুধীর দাস, শিমুলকান্দি উচ্চ বিদ‍্যালয়ের সভাপতি হাজী আফিকুল ইসলাম হারিছ, প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন, টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ আমিন, রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল উদ্দিন, কালের কন্ঠের প্রতিনিধি আদিল উদ্দিন আহমেদ ও  স্মরণসভায় ডা. নলিনী রঞ্জন দাসের পরিবারের সদস্যদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তার কনিষ্ঠপুত্র সাংবাদিক অধ্যাপক সত্যজিৎ দাস ধ্রুব।