সারা বিশ্বে বাঙালিরা ছড়িয়ে আছেন। দেরীতে হলেও তাদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানে নিয়মিত ভিনদেশে বাংলা সিনেমা রপ্তানি হচ্ছে। প্রবাসী বাঙালিদের বাংলা সিনেমা দেখানোর টার্গেট নিয়ে ইতোমধ্যে পেশাদার পরিবেশকও তৈরী হয়ে গেছে। যা বাংলাদেশি সিনেমা বাণিজ্যের জন্য বিশেষ ঘটনা বলে মনে করেন সিনেবোদ্ধারা।
পরিবেশনার সব নিয়ম কানুন মেনে ভিনদেশে বাংলাদেশের সিনেমার বাণিজ্যিক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে বেশ ক’বছর আগেই। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালির প্রেক্ষাগৃহে এখন নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশি সিনেমার বাণিজ্যিক প্রদর্শনী চলছে। এতে বাংলা সিনেমার বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি ভূমিকা রাখছে অর্থ যোগের বিষয়টিও।
ভিনদেশে বাংলা সিনেমার বাণিজ্য বিস্তারের বিষয়টি আগামি দিনে সিনেমার বাজেটেও প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন অনেক সিনেবিশ্লেষক। পরিবেশকরা তাই সব সময় বলেন, এ ধারা অব্যাহত রাখতে ভালো কন্টেন্ট নির্মাণের বিকল্প নেই।
গত কয়েক বছরে দেশি সিনেমা রপ্তানির বিষয়টির দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে যে সিনেমাগুলোর মুক্তি ঘিরে দর্শক উন্মাদনা থাকে, সে সিনেমাগুলো দেখতেই প্রবাসীরা মুখিয়ে থাকেন। আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক, দেবী, পরাণ, হাওয়া, পাপপুণ্য থেকে শুরু করে সর্বশেষ গেল ঈদে মুক্তি পাওয়া প্রিয়তমা ও সুড়ঙ্গ- দেশের পাশাপাশি এই সিনেমাগুলো ভিনদেশের প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও আলোড়ন তৈরী করেছে। প্রবাসীরা আগ্রহী হয়েছেন বলেই পরিবেশকরা সিনেমাগুলো রপ্তানি করে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন দেশে মুক্তি দিয়েছেন।
এই সময়ে বাংলাদেশের সিনেমা বিশ্ব বাজারে পরিবেশনার বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশক সংস্থা স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। বেশকিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা আমেরিকা, কানাডায় বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দিয়ে সফল হয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া বায়স্কোপ, ঈগল এন্টারটেইনমেন্ট, পথ প্রডাকশন এবং দেশি ইভেন্টস এর মতো কিছু সংস্থাও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দিয়ে থাকে। সর্বশেষ এই সংস্থাগুলো বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দিয়েছে প্রিয়তমা, সুড়ঙ্গ ও প্রহেলিকা।
এরমধ্যে আমেরিকা ও কানাডায় ‘প্রিয়তমা’ মুক্তি দিয়েছে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। কমস্কোর-এর বরাতে সম্প্রতি এই পরিবেশক সংস্থাটি জানিয়েছে, দেবী’র আয় টপকে উত্তর আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের সেরা তিন সিনেমার এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেছে ‘প্রিয়তমা’। এখন পর্যন্ত ভিনদেশের প্রেক্ষাগৃহ থেকে সবচেয়ে বেশী আয় করা সিনেমার তালিকায় আছে মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম ছবি ‘হাওয়া’। উত্তর আমেরিকায় সর্বোচ্চ আয় করা ‘হাওয়া’র আয় ৩ লাখ ৫৮হাজার ডলার। এরপরের জায়গাটি রায়হান রাফীর ‘পরান’ এর দখলে। আয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ডলার! তৃতীয় অবস্থানে থাকা ‘প্রিয়তমা’র আয় ছাড়িয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার!
অন্যদিকে আয়ের দিক থেকে ‘হাওয়া’ শীর্ষে থাকলেও ভিনদেশে প্রেক্ষাগৃহ প্রাপ্তির পরিসংখ্যানে বাংলাদেশি সিনেমার মধ্যে এগিয়ে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘পাপ পুণ্য’। তারকাবহুল ছবিটি মুক্তি পেয়েছিলো সর্বোচ্চ ৯১টি স্ক্রিনে! অন্যদিকে বক্স অফিস মাত করা ‘হাওয়া’ মুক্তি পেয়েছিলো ৮৬টি স্ক্রিনে!
ভিনদেশে বেশী স্ক্রিন পাওয়ার রেকর্ডটি সম্ভবত আর খুব বেশীদিন নিজের দখলে রাখতে পারছে না ‘পাপ পুণ্য’! কারণ আগামি ২৫ আগস্ট উত্তর আমেরিকায় অন্তত দেড়শো স্ক্রিনে মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশ-আমেরিকার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বিগ বাজেটের ছবি ‘এমআর-৯’ (মাসুদ রানা সিরিজ অবলম্বনে নির্মিত)। এই ছবিটির পরিবেশনাতেও আছে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। কানাডা ও আমেরিকার পরিবেশক হিসাবে এটি তাদের বিশ নম্বর সিনেমা! এতে মাসুদ রানার চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবিএম সুমন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ডাবিংকৃত এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলিউডের তরুণ নির্মাতা আসিফ আকবর।