রানতাড়ায় নাঈম শেখ হতাশ করলেও আরেক ওপেনার লিটন দাস টিকে থাকলেন শেষ পর্যন্ত। অধিনায়কের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশ পেল সহজ জয়। আফগানিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করল স্বাগতিক দল। আগেই সিরিজ হেরে বসা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে পেল স্বস্তির জয়। আফগানদের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে আত্মবিশ্বাস ফিরল টাইগার্স ড্রেসিংরুমে।
চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাজটা সহজ করে দেয় বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণ। টাইগার পেসারদের পাশাপাশি স্পিনারদেরও জ্বলে ওঠার দিনে আফগানরা ৪৫.২ ওভারে গুটিয়ে যায় মাত্র ১২৬ রানে। জবাবে ২৩.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ।
ওপেনার লিটন ৬০ বলে ৫৩ ও তাওহিদ হৃদয় ১৯ বলে ২২ রানে অপরাজিত থেকে খেলা শেষ করেন।
বন্দরনগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দলীয় ২ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের মতোই হতাশায় ডোবান নাঈম। বাঁহাতি ওপেনার রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড হন। ফজলহক ফারুকির ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাটের কানায় লেগে ভাঙে স্টাম্প।
নাজমুল হোসেন শান্ত ১৫ বলে ১১ রান করে ফারুকির দ্বিতীয় শিকার হন। ২৮ রানে পড়ে স্বাগতিকদের দ্বিতীয় উইকেট।
অধিনায়ক লিটন ও সাকিব আল হাসান মিলে খেলতে থাকেন দারুণ। ৬১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙে সাকিবের বিদায়ে। ৩৯ বলে ৩৯ রান করে দলীয় একশর কাছে গিয়ে মোহাম্মদ নবীর বলে হাসমতউল্লাহ শাহিদীর হাতে ক্যাচ দেন এ বাঁহাতি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর দ্বিতীয়টিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজ হাতছাড়ার পর তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টাইগাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারল। একাদশে ফেরা শরিফুল ইসলামের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ১২৬ রানে অলআউট করে দেয় আফগানদের। তাতে হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায়ও এড়ায়।
চট্টগ্রামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমেছিল আফগানিস্তান। পেস ও স্পিনারদের দাপুটে বোলিংয়ে ৪৫.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারায় সফরকারী দল। ৯ ওভার বল করে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা পারফর্ম করেছেন শরিফুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ ওভার বল করে ৩৪ রান খরচায় ৪ উইকেট ছিল টাইগার পেসারের আগের সেরা।
ব্যাটে নেমে শুরুতেই শরিফুলের তোপে পড়ে আফগান দল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দলীয় ৩ রানে টাইগার তারকা তুলে নেন ২ উইকেট। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ফেরান ৬ বলে ১ রান করা ইব্রাহিম জাদরানকে। পঞ্চম বলে ফেরান তিনে নামা রহমত শাহকে। তিনি টপ এজে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শূন্য রানে।
ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে আঘাত হানেন আরেক পেসার তাসকিন। ১৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় সফরকারী দল। মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন গুরবাজ। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ১৫ রানে মোহাম্মদ নবীকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান শরিফুল। ৯ বলে ১ রান করে আফগান অলরাউন্ডার ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে।
দুই পেসারের দাপুটে বোলিংয়ের পর আফগান ব্যাটিংয়ে পঞ্চম আঘাত হানেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ১৬তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৩২ রানে এলবিডব্লিউর শিকার বানিয়ে ফেরান নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। ২২ বলে ১০ রান করেন তিনি।
উইকেট তোলার জুটিতে যোগ দিয়ে আফগানদের ষষ্ঠ ব্যাটারকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ২২তম ওভারের তৃতীয় বলে বোল্ড করেন হাসমাতুল্লাহ শাহিদীকে। আফগান অধিনায়ক ফেরেন ৫৪ বলে ২২ রান করে।
ম্যাচের ২৭তম ওভারের তৃতীয় বলে নিজের চতুর্থ শিকারের দেখা পান শরিফুল। দলীয় ৬৮ রানে আব্দুল রহমানকে ফেরান তাইজুলের ক্যাচ বানিয়ে। ২০ বলে ৪ রান করে যান তিনি। ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ৮৯ রানে আফগানদের সপ্তম উইকেট তুলে নেন তাইজুল। ৩০ বলে ৫ রান করা জিয়া-উর রেহমানকে ফেরান বোল্ড করে।
পরে মুজিব উর রহমানকে নিয়ে দলীয় শতরান পার করেন আজমাতুল্লাহ ওমরজাই। আফগানদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে ৪৪তম ওভারের শেষ বলে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ফিফটি স্পর্শ করেন ওমরজাই।
৪৫তম ওভারের শেষ বলে ১২৫ রানের সময় মুজিবকে ফেরান মিরাজ। ডিপ মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আফিফের তালুবন্দি হন আফগান স্পিনার। ৩৪ বলে ১১ রান করে যান।
দুই বল পরই আফগানদের গুটিয়ে দেন তাসকিন। ৭১ বলে ৫৬ রান করা ওমরজাইকে বানান শেষ শিকার। লংঅফের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন নাঈম শেখের হাতে। ৪৫.২ ওভারে ১২৬ রানে থামে সফরকারীদের ইনিংস।
চারটি উইকেট নেন টাইগার পেসার শরিফুল। দুটি করে উইকেট নেন তাসকিন ও তাইজুল। সাকিব-মিরাজ নেন একটি করে উইকেট। সাকিব ১০ ওভার বল করে দিয়েছেন মাত্র ১৩ রান। যার মধ্যে মেডেন একটি।