কিছুদিন আগেও নুরুল হাসান সোহান ছিলেন জাতীয় দলের অনিয়মিত ক্রিকেটার। টাইগার স্কোয়াডে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার বেশি হওয়ায় তাকে একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে বেশি। দুর্ভাগা সেই ক্রিকেটারই এখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গায় জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টুয়েন্টির কাপ্তান তিনি। টাইগারদের অধিনায়ক হিসেবে রোববার প্রথম এলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। ২০ মিনিট ধরে নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন। জানালেন রোমাঞ্চে গা না ভাসিয়ে দায়িত্ব সারতে চান সততা নিয়ে। দল হিসেবে লড়তে চান জিম্বাবুয়ে সিরিজে।
অধিনায়ক হিসেবে কেমন লাগছে?
সোহান: এটা অবশ্যই গর্বের ব্যাপার। সামনে যে চ্যালেঞ্জটা আছে, সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। খুব বেশি রোমাঞ্চ বা এসবের কোনো সুযোগ নেই। দল হিসেবে সেরাটা দেয়াই লক্ষ্য।
কোন জায়গায় বেশি কাজ করতে চান?
সোহান: ঘরোয়া ক্রিকেটে যখনই অধিনায়কত্ব করেছি, সবসময় আমার মাথায় একটাই চিন্তা থাকে, সবসময় চাই যেন দল হিসেবে খেলতে পারি। চাই জিম্বাবুয়েতেও যেন দল হিসেবে খেলতে পারি এবং মূল ব্যাপার হল, দলের পরিবেশ যেন ভালো থাকে। সবাই তো প্রতিদিন পারফর্ম করবে না, আমরা দলের সদস্য যারা থাকব, একজনের সাফল্যে যেন আরেকজন উপভোগ করি। আমার কাছে মনে হয় এই সংস্কৃতিটা ও দল হিসেবে খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন অধিনায়কের কাছে ভক্তদের প্রত্যাশা থাকবে নতুন কিছুর…
সোহান: টেস্ট ও টি-টুয়েন্টিতে আমরা ওয়ানডের তুলনায় পিছিয়ে আছি। আমার কাছে মনে হয়, উন্নতি করাটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেই চেষ্টাটাই করছি। আউটকামের চেয়ে প্রসেস খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই চেষ্টাই করব। আমার কাছে এই সিরিজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেটা মনে হচ্ছে, সেটা হচ্ছে একটা দল হিসেবে খেলা। যদি আমার জীবন নিয়ে কথা বলি, ক্রিকেট এবং সবকিছু নিয়ে প্রত্যাশা, সেটা আমার ভেতরে খুব কম। সবকিছু মিলিয়ে রোমাঞ্চ বা এসব অনেককিছুই কম। আমার মনে হয়, নিজে সততার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করব এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করব। রেজাল্ট নিয়ে অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। চাপ থেকে এখন দূরে থাকার চেষ্টা করি। গত অনেকদিন ধরেই করতে পারছি। আমার জন্য এটা বড় ব্যাপার হবে না।
পাওয়ার-প্লে’র সমস্যা রয়েই গেছে। আফিফ হোসেনকে কি ব্যাটিংঅর্ডারে প্রমোশন দেয়ার ভাবনা আছে?
সোহান: একটা প্রক্রিয়ার ভেতরে অবশ্যই থাকবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আমরা মাত্রই এসেছি, সবার সঙ্গে সামনের সিরিজ নিয়ে কথা হয়নি। জিম্বাবুয়ে গেলে নিশ্চয়ই এটা নিয়ে আলোচনা হবে। টি-টুয়েন্টিতে অবশ্যই পাওয়ার প্লে’র অনেক বড় গুরুত্ব থাকে। আমরা এই জায়গায় উন্নতির অনেক চেষ্টা করছি। আশা করছি, আমরা ভালো করতে পারব। আফিফ কোথায় ব্যাটিং করবে, সেটা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। টি-টুয়েন্টিতে ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করে কিছু করতে পারবেন না। কারণ, অনেক সময় পরিস্থিতি একেকরকম থাকে। এটা আসলে পরিস্থিতির উপর অনেককিছু নির্ভর করে।
সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছাড়াই সিরিজ…
সোহান: বাংলাদেশ ক্রিকেটে আমাদের সিনিয়রদের অবদান এক-দুই কথায় বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের জন্য এটা একটা সুযোগ। কারণ, তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছেন। আমরা যারা জুনিয়র আছি বা এখন খেলছি তাদের জন্য এখন সুযোগ দলকে এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার। এটা আমাদের সবার জন্য একটা সুযোগ। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে খেলা। চেষ্টা থাকবে আমরা সবাই যেন সেটা করতে পারি।
নিজের ব্যাটিং নিয়ে কী ভাবনা?
সোহান: টি-টুয়েন্টিতে আমরা যারা মিডল অর্ডারে বা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করি, সেখানে রানের সংখ্যার চেয়ে ইমপ্যাক্টটা অনেকবেশি গুরুত্বপূর্ণ। ১৫-২০ রান দেখতে অনেক ছোট লাগতে পারে। তবে আমার মনে হয়, এই রান খেলায় কতটা প্রভাব রাখতে পারছে সেটাই আমার চিন্তা থাকবে। যখন সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে খেলি তখন আমার লক্ষ্য থাকে, দল কী চাচ্ছে, সেটা মেটানো। যেহেতু এই সিরিজে অধিনায়কত্ব করছি লক্ষ্য থাকবে, দল হিসেবে কীভাবে খেলতে পারি সেটা নিশ্চিত করা।
পাওয়ার হিটিং কতটা দেখা যাবে?
সোহান: আমার কাছে মনে হয়, ভীতিহীন ক্রিকেট খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে, সেটা যেন করতে পারি। ফল নিয়ে আগে থেকে চিন্তা অনেক সময় প্রক্রিয়া ঠিক থাকে না। প্রক্রিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফল নিয়ে খুব বেশি কিছু চিন্তা করছি না। ভীতিহীন ক্রিকেট খেললে ইতিবাচক কিছু হওয়ার সম্ভাবনা অনেকবেশি থাকে।
নতুন অধিনায়ক, নতুন কী চেষ্টা থাকবে?
সোহান: কথা তো অনেককিছুই হয়। এর প্রভাব যেন আমাদের খেলোয়াড়দের উপর না পড়ে। আপনি যখন ফিয়ারলেস থাকবেন, তখন অনেক অপশন বেরিয়ে আসবে। যখন মনের ভেতর কিছু নিয়ে ভয় কাজ করবে, তখন অনেককিছুই নেগেটিভ দিকে যায়। ভীতিহীন ক্রিকেট খেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। দল হিসেবে যেন খেলতে পারি এটা নিশ্চিত করা।
অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব, অধিনায়ক হিসেবে স্কোয়াড গঠনে ভূমিকা রাখতে পেরেছেন?
সোহান: একটা প্রক্রিয়ার ভেতর আছি। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে এসেছি, নির্বাচকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমাকে যখন জানানো হল তখনও কথা হয়েছে। আমাদের এখানে খুব বেশি অপশন ছিল তা কিন্তু না। যারা কয়েক বছর ধরে খেলছে তারাই খেলছে। এসব নিয়ে আলোচনা করার যে অনেক সময়ও ছিল তাও না। যে দল পেয়েছি তাতে আমি খুশি।
পুরো সিরিজ খেলার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন। যেহেতু আপনি অধিনায়ক। এটি কি ভালো ব্যাটিংয়ে সহায়তা করবে কিনা?
সোহান: এসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। চিন্তা করি, যে সুযোগটা পাবো অবশ্যই চিন্তা করব সেখানে শতভাগ দেয়ার। এখন ফল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। প্রক্রিয়া ঠিক রেখে সততার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে চাই। সেটাই যেন দিতে পারি, ওই লক্ষ্য থাকবে।
দল নিয়ে কী চিন্তা-ভাবনা করছেন?
সোহান: আমার ভাবনা এই তিন ম্যাচ নিয়েই। আমার মনে হয়, আমরা কীভাবে এখানে ভালো করতে পারি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট বিশেষ করে টি-টুয়েন্টিতে জিতবোই, এমন কোনো কথা নেই। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে, শতভাগ দিয়ে এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারি আর ফল যেন ইতিবাচক হয়, সেদিকে নজর থাকবে।