দশ ব্যাটারের নামের পাশে দুই ডিজিট। বৃহস্পতিবার সকালে তাইজুল ইসলাম ২ রান যোগ করতে পারলে তিনিও ছুঁয়ে ফেলবেন দুই অঙ্ক। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট শুরুর দিন ব্যাটিং করা কতটা সহজ ছিল সেটিই বুঝিয়ে দিচ্ছে এই পরিসংখ্যান। তারপরও বাংলাদেশ বড় সংগ্রহের পথে যেতে পারল না। ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১০ রান তোলার পর আলোর স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় প্রথম দিনের খেলা।
বাংলাদেশ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় আশা জাগিয়েছিলেন তিন অঙ্ক ছোঁয়ার। ৮৬ রানে ইস সোধির বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেন। বাকিরা উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। ছিল সাজঘরে ফেরার তাড়া।
টেস্ট মেজাজ থেকে বেরিয়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কিউই বোলারদের উইকেট উপহার দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, নুরুল হাসান সোহানরা। ব্যক্তিগত রানের জন্য না ছুটে জুটি গড়ার চেষ্টা করলে চারটা-পাঁচটা উইকেট অক্ষত রাখতে পারত বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের চা-বিরতির আগে ও পরের ধসে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ৫৩ রানের ব্যবধানে স্বাগতিকরা হারায় চার উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ (২০) কাইল জেমিসনের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে অদ্ভূতভাবে আউট হন।
টেস্ট অভিষেক ঘটা শাহাদাত হোসেন দীপু আউট হন আরও বাজেভাবে। গ্লেন ফিলিপসের অফস্পিনের মুখে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন। ৫৪ বলে তিনটি চারে করেন ২৪ রান।
নুরুল হাসান সোহান ক্রিজে এসে দেখান আগ্রাসী মেজাজ। ২৯ রান করে ফিলিপসকেই উইকেট দেন। লেগস্টাম্পের বাইরে দিয়ে বল যাচ্ছিল রানের নেশায় সোহান ব্যাট ছোঁয়ান। কানায় লেগে বল জমে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের গ্লাভসে। ২৮ বলের ক্যামিওতে চারের মার ছিল ৫টি।
নাঈম হাসান ১৬ রান করে আউট হন। দলের রান তখন ২৯০। সেখান থেকে তাইজুল ও শরিফুল ইসলাম শেষের জুটি অক্ষত রেখে তিনশ পার করেছেন। দিনের খেলা ৫ ওভার কম হয়েছে।
বাংলাদেশকে বেশি ভুগিয়েছেন ফিলিপসই। টেস্টে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার কিউই অফস্পিনারের সামনে থাকবে ফাইফারের হাতছানি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ১২ রান করে বাঁহাতি স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেলের দ্বিতীয় শিকার হন। বাউন্ডারির আশায় শট খেলতে গিয়ে ওয়াইডিস মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দেন। দিনের তৃতীয় সেশনের শুরুতে ২১০ রানে বাংলাদেশ হারায় পঞ্চশ উইকেট।
তার আগে দারুণ জমে উঠেছিল বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট জুটি। শতরানের খুব কাছে গিয়ে মুমিনুল হকের বিদায় থমকে দেয় ছন্দ। ফিলিপসের সাধারণ এক ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে ব্যাটের নিচের অংশ লেগে বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।
৮৮ রান যোগ করার পর ভাঙে তৃতীয় উইকেট জুটি। আর ৪ রান আসতেই হারাতে হয় চতুর্থ উইকেট। দলীয় সংগ্রহ দুইশ ছোঁয়ার আগেই।
১৬৬ বলে ১১ চারে ৮৬ রানে থামেন জয়। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে অনেকটা পথ টানেন ২৩ বছর বয়সী ওপেনার। ৭৮ বলে ৪টি চারে ৩৭ রান করে ফেরেন মুমিনুল।
২২ গজে এসে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্রুতগতিতেই রান তুলতে থাকেন। তবে লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। প্রথম সেশনের বিরতির কয়েকমিনিট বাকী থাকতে উইকেট ছুঁড়ে আসেন টাইগার অধিনায়ক। ফিলিপসের শিকার হয়ে ফিরে যান সাজঘরে।
টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ফিলিপস পান সফলতার দেখা। ওভারের দ্বিতীয় বলে ফুলটস দেন। চড়াও হতে গিয়ে টাইমিং ঠিকঠাক করতে পারেননি শান্ত। বাংলাদেশ ইনিংসের সবচেয়ে দৃষ্টিকটু আউট বাংলাদেশ অধিনায়কেরই।
টপ এইজ হয়ে উপরে ওঠে যায় বল। মিডঅনে ধরা পড়েন কেন উইলিয়ামসনের হাতে। ৯২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩৫ বলে ৩৭ রান করেন শান্ত। ছিল দুটি চার ও তিনটি ছক্কার মার।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। শীতের সকালে সাউদি-জেমিসনের পেস আক্রমণ দারুণ সামলান জাকির হাসান ও জয়। জুটি ফিফটি ছোঁয়ার আগে জাকির অ্যাজাজ প্যাটেলের ঘূর্ণির সামনে নিরুপায় হয়ে বোল্ড হন। ৪১ বল মোকাবেলায় এক বাউন্ডারিতে করেন ১২ রান। দলীয় ৩৯ রানে স্বাগতিকরা প্রথম উইকেট হারায়।