স্কোরবোর্ডে মাত্র ১১০ রানের পুঁজি নিয়েও লড়াই জমিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্রুতই প্রতিপক্ষের পাঁচ ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়েছিল রোমাঞ্চকর জয়ের আভাস। যদিও শেষপর্যন্ত জয়টা আর হাতে ধরা দেয়নি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানের পরাজয়ে তিন ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ড্র নিয়েই দেশে ফিরবে লাল-সবুজের দল।
রোববার মাউন্ট মঙ্গানুইতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা টিম টাইগার্স নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ১৯.৪ ওভারে মাত্র ১১০ রানে অলআউট হয়। জবাবে কিউইরা ১৪.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৯৫ রান তোলার পর বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়। জয়ের জন্য ওই সময় নিউজিল্যান্ডের কমপক্ষে ৭৮ রান দরকার ছিল। পরে বল আর মাঠে না গড়ানোয় অতিথি দলের হার নিশ্চিত হয়।
সহজ লক্ষ্য তাড়ায় সফরকারীদের বিপক্ষে দ্রুত ৫ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা চাপে পড়ে। দ্বিতীয় ওভারে টিম সেইফার্ট এক রান করে শেখ মেহেদী হাসানের বলে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। এরপর এক রান করা মিচেল সাজঘরে ফেরেন। শেখ মেহেদীর বলে তিনি নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দি হন।
গ্লেন ফিলিপসও এক রানে সাজঘরে ফেরেন, শরিফুল ইসলামের বলে হন বোল্ড। অ্যালেনের সঙ্গে সংঘর্ষের মুখে পড়ে এক রানে আউট হন মার্ক চ্যাপম্যান।
নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকলেও আরেক প্রান্ত আগলে বড় ইনিংস খেলার পথে ছিলেন ফিন অ্যালেন। ৩১ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করা কিউই ওপেনারকে বোল্ড করে খেলা জমিয়ে তোলেন শরিফুল। ৪৯ রানেই ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
দশম ওভারে খানিকটা জুয়া খেলে বল হাতে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই জুয়া অবশ্য কাজে লাগেনি। ১৪ রান খরচ করে বসেন টাইগার অধিনায়ক। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে গড়ে ওঠে জেমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনারের অবিচ্ছিন্ন ৪৬ রানের জুটি। এটিই নির্ধারণ করে দেয় ম্যাচের গতিপথ। বৃষ্টির আগে এই জুটির কারণেই বৃষ্টি আইনে ১৭ রান এগিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড, শেষপর্যন্ত ম্যাচটাও জিতে নেয়।
জেমি নিশাম ২০ বলে এক চার ও ২ ছক্কায় ২৮ ও স্যান্টনার ২০ বলে এক চারে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের পক্ষে শেখ মেহেদী ৪ ওভারে ১৮ ও শরিফুল ৩,৪ ওভারে ১৭ রানের বিনময়ে ২ উইকেট পান।
এর আগে পাওয়ার প্লেতে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করলেও তিন ব্যাটারকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর কেউই গড়তে পারেননি বড় জুটি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনে সফরকারীরা ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। সিরিজ জয়ের মিশনে তাই খেতে হয়েছে বড় হোঁচট। কিউইদের ১১১ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি লাল-সবুজের দল।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ১৯.৪ ওভারে ১১০ রানেই গুটিয়ে যায়। টিম সাউদির করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে মিড অফের উপর দিয়ে চার মারেন সৌম্য। পরের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ৪ রানে তিনি ড্রেসিংরুমে ফেরেন।
থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ শান্ত। ১৩ বলে ৪টি চারে ১৭ রানে তিনি অ্যাডাম মিলনের বলে ফিন অ্যালেনের তালুবন্দি হন।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সেয়ার্সের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ১০ বলে ২ চারে ১০ রান করা রনি তালুকদার।
মিচেল স্যান্টনারের করা নবম ওভারে রক্ষণাত্মক খেলতে যাওয়া আফিফ হোসেনের বল ব্যাটে লাগার পর প্যাডে আঘাত হাতে। অনায়াসেই ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক টিম সেইফার্ট। ১৩ বলে ২ চারে ১৪ রান করেন আফিফ।
এরপর স্যান্টনারের বলে সেইফার্টের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে ১৮ বলে ২ চারে ১৬ রানে ফেরেন তাওহীদ হৃদয়। ৪ রান করা শেখ মেহেদী হাসানের উইকেটও নেন স্যান্টনার। ১৪ বলে ৯ রানে স্যান্টনারের চতুর্থ শিকার হয়ে ফেরেন শামীম।
৪ রানের বেশি করতে পারেননি শরিফুল ইসলাম। সেয়ার্সের বলে জেমি নিশামের তালুবন্দি হয়ে মাঠ ছাড়েন। দলীয় স্কোর একশ পেরোনোর পর তানজিম হাসান সাকিবের জায়গায় একাদশে আসা তানভীর ইসলাম ৮ রানে ইশ সোধির হাতে ধরা পড়েন। শেষ ওভারে মিলনের বলে ১০ রান করে বোল্ড হন রিশাদ হোসেন। চার বল হাতে রেখে অলআউট হয় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমান ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ম্যাচসেরা স্যান্টনার ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচায় ৪ উইকেট দখল করেন। অ্যাডাম মিলনে ২৩, টিম সাউদি ২৫ বেন সেয়ার্স ২৮ রানের বিনিময়ে পান ২ উইকেট।