মাঠে স্বাগতিক খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব বেশ স্পষ্টভাবেই চোখে লাগল। পাস দেয়ার প্রবণতার তুলনায় শট নেয়াই যেন ছিল লক্ষ্য। অগোছালো খেলার খেসারত দিয়ে নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৭ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের রানার্সআপ হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য এখনও টিকে আছে। সন্ধ্যায় রাশিয়ার বিপক্ষে ভারত হারলেই লিগভিত্তিক এ আসরের পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থাকবে লাল-সবুজের দল।
চার ম্যাচে দুই জয়, এক ড্র ও এক হারে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে আছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সবকটিতে জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রাশিয়া। সমান ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ভারত। চার ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে আসর শেষ করেছে নেপাল। সব ম্যাচ হেরে তলানিতে থাকা ভুটানের পয়েন্টের খাতা শূন্য।
রাশিয়ার বিপক্ষে ড্র করলে ভারতের পয়েন্ট হবে ৭। গোল ব্যবধানে টিম ইন্ডিয়া বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী সমান পয়েন্টে থাকা দলের ভেতর হেড-টু-হেডে এগিয়ে থাকা দল টেবিলে উপরে থাকবে। ভারতকে হারানোর ফলে বাংলাদেশ তখন হবে রানার্সআপ।

গোল পার্থক্যে সবার চেয়ে এগিয়ে রাশিয়া (+১৪), পরের অবস্থানে ভারত (+১১)। অঘটন ঘটিয়ে রাশিয়াকে ২-০ গোলে হারাতে পারলে ভারতের সামনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে।
মঙ্গলবার বিকেলে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের শুরুর একাদশে ছিল একটি পরিবর্তন। বেঞ্চে ছিলেন অধিনায়ক রুমা আক্তার। সহ-অধিনায়ক জয়নব বিবি রিতা আর্মব্যান্ড পরে নামেন। রুমার বদলে খেলতে নামেন ঋতু আক্তার।
প্রথম মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে ভলি করেন ঝুমা বিশ্বকর্মা। পোস্টের অনেকটা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লাল-সবুজের দলের গোলরক্ষক সঙ্গীতা রানি দাস কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থায় দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বল কোনোমতে গ্লাভসবন্দি করেন।
আট মিনিটের মাথায় গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। মাঝ মাঠ থেকে পুনাম জেমজংয়ের পাসে বল নিয়ে একাই ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ে বক্সে ঢুকে পড়েন সেনু পারিয়ার। ডিফেন্ডার রিতাকে কাটিয়ে ডান পায়ের কোণাকুণি উঁচু শটে দর্শনীয় গোল করে নেপালকে এগিয়ে দেন সেনু। পরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো করে উদযাপনও সারেন।
খেলায় স্বাগতিক দলের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল দেদার। পাস দেয়ার প্রবণতার তুলনায় শট নেয়াই যেন ছিল লক্ষ্য। ১৯ মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। নেপাল গোলরক্ষককে একা পেয়েও ভলি না করে অহেতুক মাটি কামড়ানো দুর্বল শটে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরাতে ব্যর্থ হন।
পাঁচ মিনিট পর রিতার কর্নার কিক থেকে আসা বলে হেড নিতে পারেননি সুরভী আকন্দ প্রীতি। পরে নুসরাত জাহান মিতুর পায়ে লেগে বল জালে জড়িয়ে যাচ্ছিল। শেষ মুহূর্তে নেপাল গোলরক্ষক সুজাতা তামাং লাফিয়ে বল লাইফ নেন।
প্রায় মাঝমাঠ থেকে ৩১ মিনিটে শট নেন রিতা। বক্সের ভেতর বল ড্রপ খেয়ে বাউন্স করে। কোনোমতে বল ধরেন তামাং। ৪২ মিনিটে কর্নার কিকে ঠিকঠাক হেড নিতে পারেননি মিতু। এ যাত্রাতেও গোল শোধে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
দুই মিনিট পর বক্সে মিতুকে ব্যাকপাস না দিয়ে নিজেই শট নেন সাগরিকা। গোলরক্ষককে একা পেয়েও মারেন মাটি গড়ানো দুর্বল শট। বল ধরতে তামাংয়ের অসুবিধাই হয়নি। এরমাঝে অফসাইডের বাঁশিও বাজান রেফারি। হতাশা নিয়ে বিরতিতে যায় গোলাম রব্বানি ছোটনের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধেও চলতে থাকে বাংলাদেশের গোল মিস। ৫১ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা সাগরিকা পোস্টের কাছে দেন দারুণ ক্রস। সময়মতো হেড করতে পারেননি প্রীতি। ছয় মিনিট পর বক্সের ভেতর প্রীতি একেবারের দুর্বল শট নিলে গোলরক্ষকের হাতে বল জমা পড়ে।
ছন্নছাড়া খেলায় গতি আনতে ৫৮ মিনিটে দুটি পরিবর্তন আনেন ছোটন। মিতুর পরিবর্তে নামেন থুইনুই মারমা। সুলতানা আক্তারের বেঞ্চে বসলে খেলা শুরু করেন কানম আক্তার। পরবর্তীতে ৬৭ মিনিটে পূজা দাসের জায়গায় নামেন তৃষ্ণা রানি।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে ভালো আক্রমণ থেকে বল পেয়ে প্রতিপক্ষের দুজনকে কাটিয়ে পেয়ে দুরন্ত শট নেন তৃষ্ণা। নেপালি গোলরক্ষক তামাং ঝাঁপিয়ে বল ঠেকান। খানিক পর নাদিয়া আক্তারের শটও তামাং প্রতিহত করেন।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ৭৫ মিনিটে ম্যাচে আসে সমতা। ডান প্রান্ত থেকে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে অনেকখানি দৌড়ে তৃষ্ণার বাড়িয়ে দেয়া বলে ডান পায়ের ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন সাগরিকা।
নেপালের হয়ে গোল করা সেনু ৭৮ মিনিটে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন। এসময় প্রীতির জায়গায় মুনকি আক্তারকে নামান ছোটন। ৮৯ মিনিটে রিতার কর্নারে থুইনুই মাথা ছোঁয়াতে না পারায় বাংলাদেশের জয়ের আশা ফিকে হয়ে যায়।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে নাদিয়ার দূরপাল্লার শট পোস্টের অনেক উপর দিয়ে যায়। তৃতীয় মিনিটে রিতার সেটপিসে ফিস্ট করেন তামাং। ফিরতি বলে কানমের হেড বারে গেলে ফেরে। এরমাঝে বাজে অফসাইডের বাঁশি। খানিকপর শেষ বাঁশিও বেজে যায়, ড্রয়ে খেলা শেষ হয়।