নাইজেরিয়ান ফুটবলার এলিটা কিংসলে দীর্ঘকাল বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে খেলছেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করে পেয়েও যান। ২০২১ সালের মার্চে নাগরিকত্বের পর সেপ্টেম্বরে হাতে পান লাল-সবুজের পাসপোর্ট। পরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ফুটবল দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পেয়েছিলেন।
চূড়ান্ত স্কোয়াডে অবশ্য এলিটা জায়গা পাননি। ফিফা ও এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন্সের ছাড়পত্র না থাকায় তার বাংলাদেশ জার্সিতে খেলার আশা অধরা থেকে যায়। পরে দুই বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, জাতীয় দলের দরজা এলিটার জন্য বন্ধই রয়েছে।
গত বছরের মে-তে এএফসি কাপে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে খেলেছেন এলিটা। মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব, মোহনবাগান ও গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে বাংলাদেশি হিসেবে তার খেলতে ছিল না কোনো বাধা। অথচ জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা হচ্ছে না।
বর্তমানে ঢাকা আবাহনীর হয়ে খেলা ৩৩ বর্ষী স্ট্রাইকারের জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে বাফুফের কাছে জানতে চেয়েছিল চ্যানেল আই অনলাইন। দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটির দায়িত্বশীলরা এলিটার বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
বাফুফের পক্ষে জানানো হয়েছে, ফিফার কাছে এলিটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল। এরপর ফিফা আমাদেরকে বড় আকারের একটি বই পাঠায়। সেখানে অন্য দেশের ফুটবলারদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তাকে খেলানোর ব্যাপারে অসংখ্য নিয়ম-কানুন দেয়া আছে।
নিয়ম অনুযায়ী, যে দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো ফুটবলার জাতীয় দলে খেলতে চান, তাকে অবশ্যই সেখানে টানা পাঁচ মৌসুম খেলতে হবে। ক্লাবের সব ম্যাচ শেষের আগে দেশ ত্যাগ করা যাবে না। এলিটা একবার বসুন্ধরা কিংসের হয়ে খেলার সময় তাদের শেষ ম্যাচের আগেই বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন। এতে তাকে জাতীয় দলে খেলানো ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো ফুটবলার নাগরিকত্ব পেলে তার ক্ষেত্রে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলায় বাধা থাকত না। এলিটা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ফিফার নিয়ম অনুযায়ী সেটি সম্ভব নয়।
তবে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ডেনমার্ক ও তারেক কাজী ফিনল্যান্ডের নাগরিক হলেও তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হয়নি। কারণ তাদের বাবা-মা বাংলাদেশি নাগরিক। তাই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও জামাল ও তারেক বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ায় তা ফিফার নিয়ম ভঙ্গের কারণ হয়নি।
একই ব্যাপার জাপানে জন্ম নেয়া ২১ বর্ষী মাতসুশিমা সুমাইয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মা মাতসুশিমা তমোমি জাপানি হলেও বাবা মাসুদুর রহমান বাংলাদেশি। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়ানোর লক্ষ্যে বসুন্ধরা কিংসে যোগ দিয়েছিলেন এ মিডফিল্ডার। বাংলাদেশের হয়ে খেলার ইচ্ছাপূরণের পথে একধাপ এগিয়েছেন সুমাইয়া। বাফুফে তাকে গত জানুয়ারিতে নারী দলের ক্যাম্পে ডেকে নিয়েছে। বাবা বাংলাদেশি হওয়ায় জাতীয় নারী ফুটবল দলে ডাক পাওয়া নিয়ে বাধা নেই তার।
ভবিষ্যতে এলিটার বাংলাদেশের হয়ে খেলার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বাফুফে পক্ষ বলছে, কাগজপত্রে এলিটার কিছু সমস্যা ছিল। ফিফা সরাসরি তাকে খেলানোর বিপক্ষে বলেনি। চাইলেই খেলানো যেতে পারে। তবে প্রতিপক্ষ দল যদি তার ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণসহ নিয়ম ভঙ্গের ঘটনা সামনে আনে, তাহলে বাফুফে বিপদে পড়বে। তাকে খেলানোটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এজন্য।