বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে কিছুটা হলেও সামনে এগোনোর পথে রয়েছে হকি। সম্প্রতি যুব হকি দল থেকে ভালো ফল এসেছে। গতমাসে এএইচএফ কাপ হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল। আগের চেয়ে ভালো করার ব্যাপারে আশার জায়গা সৃষ্টি হলেও আর্থিক সংকটে দেশের হকি ফেডারেশন নিয়মিত করতে পারছে না খেলোয়াড়দের ক্যাম্প। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কোচ নিয়োগ দিতে না পারা খেলাটির অগ্রগতির পথে বড় বাধা।
বুধবার চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় আর্থিক সংকটের বিষয়ে কথা বলেন হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ। জানালেন জাতীয় এবং বয়সভিত্তিক দলের সার্বিক অবস্থাও।
‘দ্রুতই জুনিয়র দলের অনুশীলন শুরু হবে। ওমানে ২৪মে থেকে ৪ জুন বসবে জুনিয়র এশিয়া কাপের আসর। মামুনুর রশিদকে প্রধান কোচ এবং হেদায়েতুল ইসলাম রাজিবকে সহকারী কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
গত মঙ্গলবার বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হলে হওয়া হকি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জুনিয়র এশিয়া কাপের জন্য তিন মাসের খণ্ডকালীন কোচ নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কোনো বিদেশি কোচ এত অল্প সময়ের জন্য আসতে রাজি হয়নি।
জুনিয়র এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে উঠতে পারলে দেশের জন্য হকি বয়ে আনবে বড় সুখবর। শেষ চারে খেলার সুযোগ মিললেই পাওয়া যাবে জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলার টিকিট। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে প্রতি টুর্নামেন্টের জন্য কোচ নিয়োগের পুরনো পথেই হাঁটছে ফেডারেশন।
কঠিন বাস্তবতা জানাতে গিয়ে মোহাম্মাদ ইউসুফ বললেন, ‘জুনিয়র দলের তিন মাসের ক্যাম্প হলে তাদের অনুশীলনের জন্য খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। দেশের বাইরে গেলে আরও ৬০-৭০ লাখ টাকা। এর ভেতর প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানোর জন্য খরচ পড়বে আরও ৫০-৬০ লাখ টাকা।’
‘ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আমাদের বলেছিলেন, বিদেশি কোচ আসলে শতকরা ৫০ ভাগ খরচ ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বহন করবে। অল্প সময়ের জন্য কেউ আসতে চায়নি।’
টাকার অভাবে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্যাম্প না হওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করে ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘৩০ জনকে নিয়ে প্রতি মাসের জন্য ক্যাম্প করলে ২০ লাখ টাকা লাগবে। ছয় মাসের জন্য হলে ১ কোটি ২০ লাখ আর বছরব্যাপী হলে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা লাগবে। সবকিছুর মূলেই আসলে টাকা। স্পন্সর পেলে নিয়মিত ক্যাম্প করা আর ভালো ফলাফল আসা সম্ভব।’
আগামী সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে অংশ নেবে বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল। অথচ টাকার অভাবে লাল-সবুজের দলের ক্যাম্পের কথা এখনই ভাবনায় আনতে পারছে না ফেডারেশন। জুনিয়র এশিয়া কাপ আগে হওয়ায় তা নিয়েই যতো পরিকল্পনা। সেটির বাস্তবায়নেও প্রধান অন্তরায় টাকা স্বল্পতা।
চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকা গোবিনাথ কৃষ্ণমূর্তি। তার সাথে চুক্তি না বাড়ানো নিয়ে ইউসুফের সাফ কথা, ‘টাকা খরচ করে দীর্ঘমেয়াদে কোচ যদি আনতেই হয়, তাহলে জাতীয় দলের জন্য ইউরোপীয় কোচ আনাই আমাদের লক্ষ্য।’
চীনের হাংজুতে চলতি বছর হতে চলা এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ থাকবেন মাহবুব হারুন। তার সহকারীর দায়িত্বে থাকছেন শহিদুল্লাহ টিটু।
এদিকে আগামী ৬ মার্চ থেকে শুরু হবে প্রথম বিভাগ হকি লিগ। যদিও চূড়ান্ত হয়নি সূচি। অংশ নিতে চলা ১২ দল হল- ঊষা ক্রীড়াচক্র, ঢাকা ইউনাইটেড, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, পিডব্লিউডি, ব্যাচেলর্স এসসি, কম্বাইন্ড এসসি, শিশু কিশোর সংঘ, মুক্তবিহঙ্গ, তরুণ সংঘ, ফরাশগঞ্জ এসসি, শান্তিনগর এসসি ও রায়েরবাজার এসসি।
কয়েক বছর ধরে হকির তিন ঘরোয়া লিগ- প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এবং প্রিমিয়ার ডিভিশনে গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। তাদের দেয়া অর্থ পর্যাপ্ত নয় বলে হকি ফেডারেশনের কোষাগার থেকে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হয়, জানালেন মোহাম্মাদ ইউসুফ। আসন্ন প্রথম বিভাগ হকিতেও হবে না তার ব্যতিক্রম।