বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে চাপে রাখলেও উল্টো পিছিয়ে পড়তে হয়েছিল ১৭ মিনিটে। প্রথমার্ধের শেষদিকে রাকিবের পায়ে গোলশোধের পর দ্বিতীয়ার্ধে দাপট দেখিয়েছে লাল-সবুজের দল। পরে তারিক ও মোরসালিনের গোলে দুর্দান্ত জয় তুলেছে জামাল ভূঁইয়ার দল। সাফে দেশটির বিপক্ষে ২০ বছর পর পাওয়া জয়ে টিকে থাকল সেমিফাইনালে খেলার আশা।
রোববার ৩-১ গোলে বাংলাদেশের জয়ের দিনে স্মরণীয় গোল তিনটি এনেছেন রাকিব, তারিক কাজী ও শেখ মোরসালিন। মালদ্বীপের একমাত্র গোলটি করেছেন হামজা। ১৭ মিনিটে মালদ্বীপকে এগিয়ে নেন হামজা। ৪২ মিনিটে লাল-সবুজদের হয়ে গোল শোধ করেন রাকিব। ৬৭ মিনিটে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন তারিক। ৯০ মিনিটে তৃতীয় গোলটি করেন মোরসালিন।
এবারের সাফে বি-গ্রুপে খেলছে বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে লড়ে হেরেছে ২-০ গোলে। সেরা চারে খেলতে মালদ্বীপকে হারানোর বিকল্প ছিল না। ২৮ জুন গ্রুপপর্বে শেষ ম্যাচে ভুটানকে হারাতে পারলে কোনো সমীকরণ ছাড়াই বাংলাদেশের মিলবে সেমিতে খেলার টিকিট।
ভারতের বেঙ্গালুরুতে ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছে বাংলাদেশ। বল দখলে ছিল আধিপত্য। প্রথম মিনিটেই আক্রমণে যায় হাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করে মালদ্বীপ। দুমিনিট পর বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যান মালদ্বীপ স্ট্রাইকার হামজা। তাকে প্রতিহত করেন হৃদয়।
সপ্তম মিনিটে মালদ্বীপের গোলমুখে দারুণভাবে বল টেনে নেন সোহেল রানা। বক্সে বল বাড়িয়ে দেন রাকিবের দিকে। দূরত্ব বেশি হওয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি রাকিব। তিন মিনিট পর আসে গোলের সুযোগ। জামালের নেয়া কর্নার কিক থেকে গোলমুখে হেড করেন তপু বর্মণ। প্রতিহত করেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক হোসাইন শরীফ।
ম্যাচের ১৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যান রাকিব। দুজনকে কাটিয়ে বল দেন সোহেল রানাকে। ভলিতে গোলমুখে শটের চেষ্টা করেন সোহেল। শট দুর্বল হওয়ায় সুফল মেলেনি।
তিন মিনিট পর গোল হজম করে বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে গোল আদায় করেন হামজা। গোল খেয়ে কিছু সময়ের জন্য আক্রমণাত্মক ধারাবাহিকতা হারায় বাংলাদেশ। যদিও বল দখলে তখনও ছিল আধিপত্য।
ম্যাচের ৩০ মিনিটে গোল শোধের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ফাহিম সফলতা আনতে পারেননি অফসাইডের ফাঁদে। তিন মিনিট পর আবারও সুযোগ আসে বাংলাদেশের। সোহেল রানার কর্নার কিক থেকে হেড করেন তপু। প্রতিহত করেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক। পরের মিনিটে আবারও গোলমুখ লক্ষ্যে রেখে শট করেন ফাহিম। দুর্বল শট ফিরিয়ে দেন হোসাইন শরীফ।
খেলার ৪২ মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। সোহেল রানার বাড়ানো বল থেকে হেডে রাকিবকে সুযোগের মঞ্চ করে দেন তপু। তপুর ঠেলে দেয়া বল হেডে জালে পাঠান রাকিব। ৪৪ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আবারও আক্রমণে যান রাকিব। দুর্দান্ত শট করেন গোলমুখে। সে যাত্রায় প্রতিহত করেন গোলরক্ষক হোসাইন শরীফ।
বিরতি কাটিয়ে ফিরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। জামালের কর্নার থেকে হেডে গোলের চেষ্টা করেন বিশ্বনাথ। বল বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে গেলে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।
ম্যাচের ৪৭ মিনিটে গোলের সুযোগ আসে ফাহিমের সামনে। সুযোগটি হাতছাড়া করেন এ ফরোয়ার্ড। পরে সমানতালে লড়তে থাকে দুদল। ৬০ মিনিটে পায়ের পেশিতে টান লেগে মাঠ ছাড়েন লাল-সবুজদের হয়ে প্রথম গোলটি করা রাকিব। পরিবর্তে মাঠে নামেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
খেলার ৬৪ মিনিটে গোলের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ইব্রাহিমের বাড়ানো বল থেকে গোল আদায় করতে পারেননি জনি। ৬৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে গোলমুখে জোরাল শট করেন শেখ মোরসালিন। কর্নারের বিনিময়ে প্রতিহত করে মালদ্বীপ।
একমিনিট পর কর্নার থেকে আসা বলেই জটলার মধ্য থেকে সুযোগ গড়ে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন তারিক কাজী। চার মিনিট পর আবারও আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। মালদ্বীপ গোলরক্ষক মোরসালিনের শট ঠেকিয়ে দেয়ার কয়েক সেকেন্ড পর নিশ্চিত গোলের সুযোগ হারান তপু বর্মণ।
ম্যাচের ৮১ মিনিটে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে ডাগআউটে ফেরেন বাংলাদেশকে লিড এনে দেয়া তারিক কাজী। পরিবর্তে নামেন মেহেদী। ৮৬ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। বক্সের কাছে গিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেন জনি।
শেখ মোরসালিন বাংলাদেশকে স্বস্তির তৃতীয় গোলটি এনে দেন ৯০ মিনিটে। তারপরও বেশ কয়েকটি সুযোগ গড়ে বাংলাদেশ। যদি ব্যবধান আর বাড়াতে পারেনি লাল-সবুজের দল। মালদ্বীপও চেষ্টা করেছে ম্যাচে ফেরার। তবে শেষ হাসিটা ছিল বাংলাদেশের। মাঠ ছেড়েছে ৩-১ গোলের জয় নিয়েই।