
দেশে কৃষিখাতের পরিবর্তন ত্বরান্বিত করার অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কৃষি বিনিয়োগ ফোরামের যাত্রা শুরু হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় পরিচালিত এই উদ্যোগের লক্ষ্য- নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎপাদনকারী ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলোর জন্য অর্থের যোগান দেওয়া।
রোববার ২৭ আগস্ট কৃষি ফোরামের যাত্রা শুরু হয়। এই ফোরাম মূল্য শৃঙ্খলের সাথে জড়িত ব্যবসায়িক নেতা, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ব্যাংক এবং নীতিনির্ধারকসহ প্রধান স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে।
ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
এই উদ্যোগের প্রধান উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে সিজিআইএআর, ডেনমার্ক দূতাবাস, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ), বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।

বক্তারা বলেন, কৃষিখাতে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জনের পর, বাংলাদেশ এখন খাদ্য নিরাপত্তা থেকে পুষ্টি নিরাপত্তা এবং খাদ্য রপ্তানির দিকে জোর দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশে খাদ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং মানুষের খাদ্য পছন্দের ধরণে এসেছে পরিবর্তন। মধ্যম-আয়ের মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ভাত থেকে মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য, ফল এবং শাকসবজির মতো আরও দামী খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
দ্রুতগতিতে চলমান নগরায়নের ফলে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়বে। ভোক্তারা খুঁজবে খাবারের ভিন্নতা, উন্নত পুষ্টি এবং উচ্চমানের খাদ্য নিরাপত্তা। যা মূলত বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনকারী এবং খাদ্য-নির্ভর ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে।
কৃষকদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোক্তারা যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হন তা মোকাবিলায় উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। বাংলাদেশ কৃষি বিনিয়োগ ফোরাম ২০২৩ সেই সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা দূর করতে সাহায্য করবে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত দুই দিনের এই ফোরাম নির্বাচিত কৃষিখাতে কৌশলগত বিনিয়োগের সুযোগ, বিভিন্ন উদ্ভাবনী আর্থিক উপকরণ অনুসন্ধান এবং বেসরকারি বিনিয়োগকারী, দেশীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ সহজতর করবে। এই ফোরাম অভিজ্ঞতা শেয়ার এবং নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধির মাধ্যমে ফলপ্রসূ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সকল উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং রপ্তানির সুযোগকে প্রশমিত করতে দেশের কৃষি-খাদ্য ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। যখন একটি দেশের উন্নয়ন চলমান থাকে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, সেই দেশ তখন বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। প্রথমবারের মত বাংলাদেশে গঠিত এই বিনিয়োগ ফোরাম, যারা বিনিয়োগ করতে চায় এবং যারা বিনিয়োগ থেকে লাভবান হতে পারে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র তৈরি করতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষি খাতে পরিবর্তন আনার ব্যাপক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করতে পেরে সব উন্নয়ন সহযোগীরা গর্বিত।
তিনি আরো বলেন, কৃষি ফোরাম-হতে পারে একটি বার্ষিক ইভেন্ট, যা ইটালির রোমে গত বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের ফলাফল। উভয় ফোরামই এফএও-এর হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড ইনিশিয়েটিভের অংশ যা জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করে এবং কৃষিখাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। এই বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য এফএও ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে অংশগ্রহণকারী প্রায় ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও থাকবে।
বিজ্ঞাপন