বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বঞ্চিত, নিপীড়িত বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। যিনি আমৃত্যু বাঙালি জাতির স্বাধীনতা, মুক্তি আর কল্যাণের গান গেয়ে গেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের। যার অকৃত্রিম দেশপ্রেমের কথা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে সকল মানুষের কাছে সমাদৃত। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশের প্রতিটি প্রান্তই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত।
এর ব্যতিক্রম নয় স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও (ইবি)। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার আদর্শ বুকে লালন করে এগিয়ে চলছে এ বিদ্যাপীঠ। যার প্রতিটি পরতে পরতে দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আর আদর্শের ছাপ। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বঙ্গবন্ধুময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বলাই যেতে পারে। মূলত বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ আর সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পরবে “মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল”। এই ম্যুরালটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত একটি প্রতিকৃতি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সমাবর্তনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ এটি উদ্বোধন করেন। বলা হয়ে থাকে, এ মুর্যালটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ মুর্যাল। এমনকি এই ম্যুরালটি এতটাই দৃষ্টিনন্দন যে, তা গুগল সার্চেও শীর্ষে রয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে রয়েছে একটি ছাত্র হল। ১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ প্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক ছাত্র হলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মোট আটটি ব্লক রয়েছে। ২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর হলের সম্মুখে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশের মানচিত্র স্থাপিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের সম্মুখে দুটি মুর্যাল, মুক্তির আহ্বান ও শ্বাশত মুজিব স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই ম্যুরাল দুইটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে এ ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়।
এসব ম্যুরালের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালটির লাইব্রেরির নিচতলায় রয়েছে “বঙ্গবন্ধু কর্ণার” যেখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বিভিন্ন বই এবং ম্যাগাজিন রয়েছে। লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ হাসিনা হলের সেমিনার লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করা হয়। খালেদা জিয়া হলেও রয়েছে বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে সাদ্দাম হোসেন হলেও উদ্বোধন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের।
জাতির পিতাকে নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা ও উচ্চতর গবেষণার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৫তম সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ার সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদিত হয়। পরে চেয়ারে অধ্যাপক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। আবেদনের ভিত্তিতে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানকে মনোনীত করেন সিন্ডিকেট। তবে তার মৃত্যুতে পদটি শূন্য রয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল’, তার সহধর্মির্ণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে ‘শেখ রাসেল হল’ এবং জামাতা এস ওয়াজেদ আলীর নামে ‘পরমাণু বিজ্ঞানী এস ওয়াজেদ আলী বিজ্ঞান ভবন’ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে নির্মিত এসব স্মৃতি নিদর্শন তরুণ প্রজন্মের মাঝে জাতির পিতার আদর্শ সঞ্চারিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মুজিবের চেতনাকে বুকে ধারণ করে সামনের দিকে অগ্রসর হবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।