এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জয়ী ভারতীয় ফুটবলার তুলশিদাস বলরাম মারা গেছেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর বৃহস্পতিবার কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
বলরামের পরিবারের এক সদস্য সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর মূত্রনালির সংক্রমণ ও পেটে সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে মারা যান।’
১৯৩৬ সালের ৪ অক্টোবর হায়দরাবাদের সেকেন্দ্রাবাদে জন্ম বলরামের। ১৯৫৬ সালে সন্তোষ ট্রফি টুর্নামেন্টে হায়দরাবাদ দলে জায়গা পান। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ওই বছরই মেলবোর্ন অলিম্পিকের জন্য জাতীয় দলে জায়গা পান। যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। সেখানে অনবদ্য ছিলেন। ভারত টুর্নামেন্টে হয়েছিল চতুর্থ।
দেশে ফেরার পর বলরামকে দলে টানতে আগ্রহ প্রকাশ করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। শুরুতে রাজি ছিলেন না তিনি। ইচ্ছে ছিল হায়দরাবাদ সিটি পুলিশের হয়ে খেলবেন। ভেবেছিলেন সেখানে থাকলে পুলিশ বিভাগের সম্মানজনক চাকুরী পেয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা যাবে। কিন্তু কনস্টেবলের চাকরি দেয়ায় মন ভেঙে যায়। পরে কলকাতা এসে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেন।
কলকাতায় আসা ছিল বলরামের জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। এসে বর্ণিল হয় তার ক্যারিয়ার। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে জিতেছেন বহু ট্রফি। গোল করেছেন ১০৪টি। কলকাতার মানুষের ভালোবাসায় একসময় এই শহরকেই নিজের নতুন বাড়ি মেনে নেন।
১৯৫৬ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত এশিয়ার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন বলরাম। চুনী গোস্বামী এবং পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেধে গড়ে তুলেছিলেন ভারতীয় ফুটবলের ত্রয়ী ইতিহাস। দু’টি এশিয়ান গেমসে অংশ নেন। খেলেছেন অলিম্পিকেও। ১৯৬২তে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে সোনা জেতে ভারত। বলরামের ড্রিবলিংয়ে হার মেনেছে জাপান, কোরিয়া, হাঙ্গেরি, ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররাও।
১৯৬৩ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ফুসফুসে জটিলতা থাকার কারণে ফুটবল থেকে অবসর নেন বলরাম। পরে বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে টিমের কোচ হিসেবে যোগ দেন। সবশেষে ভারতের জাতীয় ফুটবল সংস্থায় নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছিলেন।