রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় দুই বছর বয়সী এক শিশু আয়েশা মনিকে তিনতলার বারান্দা থেকে ফেলে হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি জান্নাতুল ওয়াইশ ওরফে নাহিদকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ২২ জুন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। আমৃত্যু কারাদণ্ডেরর পাশাপাশি তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা আসামি নাহিদকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী শিশুটির বাবা মো. ইদ্রিস। তিনি বলেন, আমার ছোট মেয়েটাকে তিনতলা থেকে ফেলে হত্যা করেছে। তার সাজা হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড। আমরা তার ফাঁসি চাই। এ রায় আমরা মানি না। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। আপিল করব। রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির মা।
গেন্ডারিয়া দীননাথ সেন সড়কে চারতলা বাড়ির পাশে টিনশেড বস্তিতে মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে থাকত আয়েশা। ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি বিকেলে বাসায় গ্যাস না থাকায় আয়েশার মা পাশের বাসায় রান্না করতে যান। তখন আয়েশা রুমেই ছিল। পরে আয়েশার মা রুমে ফিরে আয়েশাকে দেখতে পাননি। সন্ধ্যার পর আশপাশের মানুষের চেঁচামেচি শুনে তিনি ছুটে যান বাসার পাশের গলিতে। সেখানে গিয়ে দেখেন, ময়লার ট্রলির পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তার মেয়ে। দ্রুত আয়েশাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় আয়েশাকে। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
৭ জানুয়ারি শিশুটির বাবা মো. ইদ্রিস বাদী হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, নাহিদ শিশুটিকে ধর্ষণের পর তিনতলা থেকে নিচে ফেলে হত্যা করেছে।
মামলা দায়েরের পর নাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে নাহিদ কারাগারেই আছে। অন্যদিকে নাহিদের মেয়ে ফাতিহা খান বুশরাও বাবার বিরুদ্ধে আদালতে জবানবন্দি দেয়।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর পিবিআই’র উপ-পরিদর্শক সাদেকুর রহমান নাহিদকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দুই বছরের শিশু আয়েশাকে পরিকল্পিতভাবে তিনতলার বারান্দা থেকে ফেলে হত্যা করে নাহিদ।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৩ সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামির পক্ষে ছয়জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।