চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

উপজেলা চেয়ারম্যানের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতার ভাতিজা নিহত

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনিতে আহত ছাত্রলীগ নেতা জামিউল ইসলাম জীবন মারা গেছেন।

শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেলের আইসিসিইউ বিভাগের প্রধান ডাঃ আবু হেনা কামাল শুক্রবার বেলা ১টা ২০ মিনিটে তার মৃতুর বিষয়টি ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার রামশাকাজীপুর আমতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। ফেসবুক লাইভে জামিউল আলিম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে নানা ‘মানহানিকর’ তথ্য ছড়ান। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে রামশাকাজীপুর আমতলী এলাকায় যান। সেখানে জীবনের সাথে ফেসবুক লাইভ করা নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়ান।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এসময় আসাদুজ্জামান আসাদসহ তার ভাই ও সমর্থকরা জীবনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় জীবনকে বাচাঁতে তার বাবা ফরহাদ হোসেন এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জীবনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জামিউলের চাচা সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এসএম ফিরোজ জানিয়েছেন, জীবনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। তার মাথা থেতলে দেওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতজনিত কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। সে কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

জীবনের পরিবারের দাবি, মঙ্গলবারেই জীবনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালীদের চাপে জীবনকে আইসিসিইউতে রেখে সময় নষ্ট করেছে।

রাজশাহী মেডিকেলের আইসিসিইউ প্রধান ডাঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বরেন, জীবনের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। আমরা আইসিসিইউতে রেখে পরিস্থিতির একটু উন্নতি হলে মাথায় অপারেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাথায় রক্ত জমাট বাধার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। অবশেষে শুক্রবার বেরা ১টা ২০মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

জীবনের মা জাহানারা বেগম বলেন, আসাদের তিন ভাই মন্টু, ফটিক, আলিম নির্দয়ভাবে পিটিয়ে মেরেছে। আমার ছেলের মত আর কোন সন্তানকে যেন এভাবে মরতে না হয়। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও মন্ত্রীদের কাছে বিচার চাই।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম ফিরোজ জানান, নির্দয়ভাবে তার ভাতিজাকে পিটিয়ে হত্যার জন্য নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদসহ যারা জড়িত তাদের প্রত্যকের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ মঙ্গলবার বিকালে জানান, মসজিদের মাইক চুরি নিয়ে গ্রামের সালিসে কিছু লোকজন জীবনের নাম বলে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে নানা মানহানিকর তথ্য ছড়ায়। এ বিষয়ে গতকাল সন্ধায় জানতে চাইলে জামিউল প্রথমে আমার মাথায় আঘাত করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপস্থিত লোকজন তাদেরকে মারধর করে।

তবে শুক্রবার চেষ্টা করেও আসাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় জামিউলের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এখন সেটি হত্যা মামলা হিসেবে রুপান্তরিত হবে। এছাড়া ইতমধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

এ বিষয়ে নাটোর ২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের কঠোরতম সাজা দাবি করছি।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তারা দলের সাথে জড়িত থাকলে তাদের ও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।