রাজধানীতে আজ দুপুরের বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কয়েকটি সহযোগী সংগঠনসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে যেকোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। যে কোন ধরনের নাশকতা রোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কখন কোথায় কোন দলের সমাবেশ
আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ শুক্রবার বিকেল ৩টায় যৌথভাবে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে এই সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
একই দিন বেলা ২টায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি পালনেও অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিএনপির এই মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে এই কর্মসূচি আয়োজনে দুই পক্ষকেই ২৩টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে ডিএমপি। এদিকে সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে বিকেল ৩টায় সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় প্রস্তুত ডিএমপি
ডিএমপির অপরাধ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ যদি সমাবেশ কর্মসূচিগুলো ঘিরে নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তাদের খুঁজে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ডিএমপির অপরাধ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে ডিএমপির জলকামান, সাঁজোয়া যান, রেকার গাড়ি ও ব্যারিকেড।’
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ টিম প্রস্তুত থাকবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
‘কন্ট্রোল রুম’ থেকে সমাবেশগুলো পর্যবেক্ষণ
ডিএমপি বলছে, দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। র্যাব, আনসার, এপিবিএনের অন্তত পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে পল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, গুলিস্তানসহ সমাবেশের নিকটস্থ এলাকায়। এছাড়াও প্রস্তুত থাকা অবস্থায় থাকবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসারের কয়েক প্ল্যাটুন সদস্যরা। বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা সাড়া দিবেন। এর পাশাপাশি ডিএমপি সদর দপ্তরে স্থাপন করা হবে কন্ট্রোল রুম। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার, বিজিবি, র্যাব ও ঢাকা হাইওয়ে রেঞ্জের কর্মকর্তারা দুই সমাবেশে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেখানে সমাবেশগুলোতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়। জানা যায়, বৈঠকে সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের বিভিন্ন বাহিনীর দায়িত্ব কী হবে তা বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
নজরদারি বাড়ানোসহ সতর্ক অবস্থানে র্যাব
সমাবেশগুলোকে ঘিরে র্যাবের ঢাকাস্থ সব কটি ব্যাটালিয়ন নজরদারি বাড়িয়েছে। র্যাব-৪ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে র্যাব-৪ এর আওতাধীন এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট মোতায়েন করে গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ র্যাব-১০ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানিয়েছে ব্যাটালিয়নটি। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, ডেমরা, ধোলাইপাড়, শ্যামপুর, ওয়ারী ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ র্যাব-১০ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ রোবাস্ট পেট্রোলের মাধ্যমে পর্যাপ্ত টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা ডিউটিতে রয়েছেন।
র্যাব-১ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে দায়িত্বাধীন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরার প্রবেশ মুখগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কেউ কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব-৩ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর প্রবেশমুখ সায়েদাবাদ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পেট্রোলিং করা হচ্ছে।
সমাবেশে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেওয়া যাবে না: ডিএমপি কমিশনার
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন সমাবেশগুলোতে রাষ্ট্রবিরোধী কোনও বক্তব্য দেওয়া যাবে না। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা আনতে পারবেন না। পাশাপাশি কোনও ধরনের ব্যাগ বহন করতে পারবেন না।
দুই দলের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন: আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার মতো কোন ধরনের কাজ করবেন না। যেকোনো দলের মধ্যে যদি আমরা এরকম দেখি তাহলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন: আমাদের কাছে বড় ধরনের কোনো হুমকি নেই। তবে কোনো কুচক্রী মহল সুযোগ নিয়ে দুর্ঘটনা বা নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।